বেওয়ারিস লাশ: রাষ্ট্র ও সমাজের দায়বদ্ধতা

এফএনএস : | প্রকাশ: ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৬:২৭ পিএম
বেওয়ারিস লাশ: রাষ্ট্র ও সমাজের দায়বদ্ধতা

একটি সভ্য ও মানবিক রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হলো তার নাগরিকদের নিরাপত্তা ও পরিচয়ের নিশ্চয়তা দেওয়া। অথচ বাংলাদেশে প্রতিবছর শত শত মানুষ মৃত্যুর পরও পরিচয়হীন থেকে যায়। ২০২৪ সালে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম ৫৭০টি বেওয়ারিস লাশ দাফন করেছে, যা বিগত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। প্রশ্ন হলো, কেন এত মানুষ মৃত্যুর পরও স্বজনদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না? কেন রাষ্ট্র তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে? বেওয়ারিস লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি রাষ্ট্রের প্রশাসনিক দুর্বলতা, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক অবহেলার ইঙ্গিত দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব লাশ দুর্ঘটনা, হত্যাকাণ্ড, আত্মহত্যা বা অসুস্থতার কারণে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের, যাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তথ্যভান্ডারে তাদের কোনো রেকর্ড না থাকা, পুলিশের তদন্তে গাফিলতি, এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে পরিবারের বিলম্বিত পদক্ষেপ এই সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে। বিষয়টি শুধু মানবিক সংকট নয়, এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিক থেকেও উদ্বেগজনক। উন্নত বিশ্বে লাশ শনাক্তকরণের জন্য বায়োমেট্রিক ডেটাবেইস, ডিএনএ পরীক্ষা, এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে এখনো এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত। জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আঙুলের ছাপ সংযোজন করা হলে অনেকাংশে এই সংকট কমতে পারে। এ সমস্যা নিরসনে রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়কেই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। জাতীয় পরিচয় ব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরি। এনআইডির পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক তথ্য সংযোজন করতে হবে, যাতে প্রত্যেক নাগরিকের পরিচয় ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত থাকে। এছাড়াও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য এবং অজ্ঞাত লাশের তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেইস তৈরি করা প্রয়োজন, যা পুলিশের তদন্তকে সহজ করবে। পাশাপাশি সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। প্রত্যেক নাগরিকের উচিত জরুরি পরিচয়পত্র বহন করা, যাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সহজে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। পরিবারের পক্ষ থেকেও নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা প্রয়োজন। একটি রাষ্ট্র তার দুর্বলতম নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করলেই সত্যিকার অর্থে মানবিক হয়ে ওঠে। অচেনা লাশের সারি দীর্ঘ হতে দেওয়া যাবে না। সে জন্য এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, হাসপাতাল, নির্বাচন কমিশন এবং নাগরিক সমাজÑসবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে, যেন আর একটি লাশও ‘বেওয়ারিস’ না থাকে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW