দেশের বিভিন্ন থানায় ও কারাগারে হামলা চালিয়ে গত বছরের আগস্টে লুট হওয়া ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্রের মধ্যে এখনও ১ হাজার ৩৯২টি উদ্ধার হয়নি। এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র অপরাধীদের হাতে থেকে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, যা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত ও দস্যুদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই লুট হওয়া অস্ত্রের অপরাধীদের হাতে চলে যাওয়া। ফলে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক কুখ্যাত ডাকাত সর্দার জিয়াউর ও তাঁর বাহিনীর কাছে লুট হওয়া অস্ত্রের উপস্থিতি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই অস্ত্র উদ্ধার হলেও এর পুরো উৎস এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। শুধু অস্ত্র উদ্ধারই যথেষ্ট নয় বরং এসব অস্ত্র কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা চিহ্নিত করাও অত্যন্ত জরুরি। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, লুট হওয়া অস্ত্রের বেশির ভাগই ডাকাত, ছিনতাইকারী ও অন্যান্য সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। পুলিশের পরিসংখ্যানও এই বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে। গত ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির ইঙ্গিত দেয়। আগস্টে ৩৭টি ডাকাতির মামলা হলেও ডিসেম্বরে তা ৭১টিতে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে দস্যুতার মামলা বেড়েছে ১০৪ থেকে ১৫৯-এ। এসব ঘটনা শুধু আর্থিক ক্ষতি নয় বরং সাধারণ মানুষের জানমালের জন্যও ভয়ংকর হুমকি তৈরি করছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী সেপ্টেম্বর মাসে অভিযান শুরু করলেও এখন তার গতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠপর্যায়ের পুলিশের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা ও চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ায় অপরাধ দমন কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণেও পুলিশের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে। এই সংকট থেকে বের হতে হলে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। যাদের হাতে এই অস্ত্র রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে অপরাধীদের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও গভীর তদন্ত চালাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। অন্যথায়, লুট হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।