ঢাকার গণপরিবহন খাত দীর্ঘদিন ধরে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। যানজট, অনিয়ন্ত্রিত বাস চলাচল, রিকশার আধিক্য এবং ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যে নগরবাসী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। শহরের সড়কব্যবস্থা সীমিত হলেও সেখানে অবৈধ যানবাহনের আধিক্য পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলেছে। রাজধানীর মোট আয়তনের মাত্র ৭.৫ শতাংশ সড়ক, যার মধ্যে গণপরিবহনের জন্য উপযুক্ত রাস্তা মাত্র ২.৫ শতাংশ। এত সংকীর্ণ পরিসরে প্রতিদিন হাজার হাজার বাস চলাচল করলেও এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাস অবৈধভাবে চলছে। বিআরটিএ-এর তথ্যমতে, শুধু শাহবাগ মোড় দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করা ১,২২৫টি বাসের মধ্যে ৬৫৫টি অবৈধ। মতিঝিল দিয়ে চলাচল করা ৫৭৫টি বাসের মধ্যে ২৬২টি অনুমোদনহীন। অন্যান্য রুটেও একই ধরনের চিত্র দেখা যায়, যেখানে বাস মালিকরা যাত্রী চাহিদার দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত বাস নামাচ্ছে, যা ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এছাড়া ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক নগরবাসীর জন্য নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব যানবাহন অলিগলি থেকে বের হয়ে মূল সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, এগুলো নিবন্ধনের আওতায় পড়ে না, ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ এগুলোই সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। এমনকি প্যাডেল চালিত রিকশার ক্ষেত্রেও অনিয়মের ছড়াছড়ি। সীমিত সংখ্যক লাইসেন্স থাকার পরও অনুমোদনহীন লাখ লাখ রিকশা রাজধানীর রাস্তায় চলাচল করছে, যা যানজটের একটি বড় কারণ। হাতিরঝিলের মতো এলাকাতেও পরিবহনের অনিয়ম স্পষ্ট। ২০১৫ সালে হাতিরঝিলে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হলেও বর্তমানে চারটি কোম্পানিÑপ্রভাতি বনশ্রী, গাজীপুর পরিবহণ, বলাকা এবং আজমেরী গ্লোরীÑঅবৈধভাবে এই রুটে বাস পরিচালনা করছে। যদিও ডিটিসিএ জানিয়েছে, এসব পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবু কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে অবৈধ বাস চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে জরুরি ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অবৈধ বাস নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএ-কে আরও কঠোর হতে হবে। অনুমোদনহীন বাস, রিকশা ও ইজিবাইক মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এছাড়াও গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে নগর পরিবহনের সম্প্রসারণ ও কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিত করা দরকার। পাশাপাশি যানজট নিরসনে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। ঢাকার গণপরিবহন সংকট নতুন কিছু নয়, তবে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও জটিল হয়ে উঠছে। তাই এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে এই সংকট আরও গভীর হবে, যা নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে।