জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে কীভাবে বের করে দেওয়া হয়, জানালেন ট্রাম্পের উপদেষ্টা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ২ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৪২ পিএম
জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে কীভাবে বের করে দেওয়া হয়, জানালেন ট্রাম্পের উপদেষ্টা
ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের মধ্যে তীব্র বাগ্‌বিতণ্ডার পর জেলেনস্কি ও তাঁর প্রতিনিধিদল হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে বাধ্য হন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি খনিজ চুক্তি চূড়ান্ত করা, তবে আলোচনার একপর্যায়ে বিতর্ক শুরু হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত বৈঠকের শুরুটা ইতিবাচক থাকলেও, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে যখন জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, মস্কোর সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের উচিত নিরপেক্ষ না থেকে কিয়েভকে আরও জোরালো সমর্থন করা। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ট্রাম্প জেলেনস্কির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রতি যথেষ্ট কৃতজ্ঞ নন এবং যুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনীয় ছাড় দিতে ইচ্ছুক নন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স তখন জেলেনস্কির কূটনৈতিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে বলে সমালোচনা করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আরও একধাপ এগিয়ে জেলেনস্কির উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেন, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে তাঁর প্রকৃত কৌশল কী, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ পরবর্তীতে ব্রেইটবার্ট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “একজন নেতা হিসেবে কখন একটি খারাপ চুক্তি বা ব্যর্থ আলোচনা থেকে সরে আসতে হবে, সেটি জানা গুরুত্বপূর্ণ।" তিনি জানান, বৈঠকের একপর্যায়ে জেলেনস্কি ও তাঁর প্রতিনিধিদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্যের সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে এবং তাঁদের চলে যাওয়ার সময় হয়েছে।

একজন হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান যে, ট্রাম্প নিজেই জেলেনস্কিকে "বের করে দিয়েছিলেন"। তবে মার্কো রুবিও ও মাইক ওয়ালৎজ দাবি করেন, জেলেনস্কির প্রতিনিধিদল বিতর্কের পর স্বেচ্ছায় হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কো রুবিও বলেন, জেলেনস্কির উচিত এই কূটনৈতিক ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চাওয়া। যদিও বৈঠকের ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন জেলেনস্কি, তবে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, মার্কিন নেতাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাঁর নেই।

ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, "দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় আমাদের অবশ্যই খুবই স্বচ্ছ ও সৎ হতে হবে।"

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন কৌশল কী হবে এবং ইউক্রেনের প্রতি তাদের ভবিষ্যৎ সমর্থন কতটা থাকবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এই উত্তপ্ত বৈঠকের ফলে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী আলোচনায় দুই দেশ সমঝোতার কোনো পথ খুঁজে বের করতে পারে কি না।