ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিত, যুদ্ধে নতুন মোড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ৪ মার্চ, ২০২৫, ০১:০৮ পিএম
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিত, যুদ্ধে নতুন মোড়
হোয়াইট হাউসে গত শুক্রবারের বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ হয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে দেওয়া সব ধরনের সামরিক সহায়তা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিষ্কার করেছেন যে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদেরও একই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা সামরিক সহায়তা স্থগিত রেখেছি এবং এটি পর্যালোচনা করছি, যাতে এটি সংকট সমাধানে সহায়তা করে।”

ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন সিদ্ধান্ত বাইডেন প্রশাসনের অনুমোদিত অস্ত্র সরবরাহের প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিতে পারে। এর ফলে ইউক্রেনের জন্য নির্ধারিত গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পৌঁছানোর বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। সাময়িক এই সহায়তা স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে হোয়াইট হাউজ বা পেন্টাগনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে জানানো হয়নি যে এই স্থগিতাদেশ কতদিন বহাল থাকবে এবং কত পরিমাণ সহায়তা এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন এক সংকট তৈরি করেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় ও ওয়াশিংটনের ইউক্রেন দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছেন যে, জেলেনস্কির উচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

ট্রাম্পের ক্ষোভের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেছিলেন, “যুদ্ধের শেষ এখনও অনেক দূরে।” এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “জেলেনস্কির দেওয়া এটি সবচেয়ে খারাপ মন্তব্য, এবং আমেরিকা এটি আর বেশি দিন সহ্য করবে না!”

গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যে এক উত্তপ্ত বৈঠক হয়। বৈঠকের এক পর্যায়ে ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনি। শুধু ট্রাম্প নন, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও জেলেনস্কির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। ভ্যান্স বলেন, “আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না,” যার উত্তরে জেলেনস্কি জোরালো কণ্ঠে বলেন, “আমি বহুবার আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।”

ব্লুমবার্গ ও ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যতক্ষণ না ট্রাম্প মনে করেন যে ইউক্রেনের নেতারা শান্তির প্রতি সদিচ্ছা দেখাচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সামরিক সহায়তা স্থগিত থাকবে। ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তার ভাষায়, “এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ নয়, এটি সাময়িক স্থগিতাদেশ।”

এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সম্পর্ক যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তা স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা এই সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায়, সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না আসলেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।