শব্দ দূষণ কমাতে পদক্ষেপ নিন

এফএনএস | প্রকাশ: ৬ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম
শব্দ দূষণ কমাতে পদক্ষেপ নিন

ঢাকা শহরের শব্দদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। নগরের রাস্তায় শব্দদূষণের ভয়াবহতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। গাড়ির হর্ন, অ্যাম্বুলেন্সের মাত্রাতিরিক্ত শব্দ, গণপরিবহন এবং রাস্তার খিস্তি আর হকারের উপদ্রবে রাস্তায় বের হলেই মাথা ঝিনঝিন করে। ঢাকায় শব্দের গড় মাত্রা ১২০ ডেসিবেল। যা সহনীয় মাত্রার দ্বিগুণ। শুধু ঢাকা নয়, দেশজুড়েই শব্দের মাত্রা নিরাপদ মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ থাকছে। এতে দীর্ঘমেয়াদে শুধু শ্রবণশক্তি বা মনোযোগ কমে যাওয়াই নয়, ঝুঁকি বাড়ছে হৃদরোগেরও। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান নীরব এলাকা। টানানো আছে হর্ন না বাজানোর নির্দেশনাও। কিন্তু কেউ মানছে না এসব নির্দেশনা। সড়ক জুড়ে হুড়োহুড়ি আর বাড়াবাড়ি দেখলে মনে হতে পারে, চোখ দিয়ে নয়, কান দিয়ে গাড়ি চালিয়ে সবাই সবার আগে যেতে চান। আবার উৎসব-পার্বণে, কারণে-অকারণে মাইক, পটকা বা আতশবাজি শব্দ দূষণের মাত্রাকে করে আরও অসহনীয়। যদিও ২০০৬ সালের পরিবেশ আইনে সুনির্দিষ্ট করে বলা আছে, এলাকাভেদে কখন কতটুকু শব্দ থাকতে পারে। বাংলাদেশে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, নীরব এলাকায় গ্রহণযোগ্য শব্দসীমা দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবল এবং রাতে ৪০ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিনের জন্য ৫৫ ডিবি এবং রাতের জন্য ৪৫ ডিবি। মিশ্র অঞ্চলে দিনের জন্য ৬০ ডিবি এবং রাতের জন্য ৫০ ডিবি। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের জন্য ৭০ ডিবি এবং রাতের জন্য ৬০ ডিবি এবং শিল্পাঞ্চলে দিনের জন্য ৭৫ ডিবি এবং রাতের জন্য ৭০ ডিবি। । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ৬৫ ডেসিবল (ডিবি) এর ওপরে শব্দের মাত্রা দূষণ হিসাবে বিবেচিত হয়। যার মধ্যে ৭৫ ডিবি ক্ষতিকারক এবং ১২০ ডিবি সরাসরি যন্ত্রণাদায়ক। ২০১৮ সালে ডব্লিউএইচও স্বাস্থ্যগত কারণে ট্র্যাফিক শব্দকে ৫৩ ডিবিতে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশ করেছিল। হর্ন বাজানো সম্ভবত আমাদের দেশের গাড়ি চালকদের একটা বদভ্যাস। ট্র্যাফিক সিগন্যাল বা জ্যামে আটকে থাকার সময়, ট্রাফিককে তাড়া দিতে কিংবা সামনে এগুনো যাবে না জেনেও ক্রমাগত হর্ন বাজান তারা। সামনে কেউ ধীর গতিতে চললে, পথচারীকে উদ্দেশ্য করে প্রতিনিয়ত হর্ন বাজান চালকরা। নীরব এলাকায় হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ। কিন্তু গাড়ির হর্নে রীতিমতো বধিরতার হার বেড়ে যাচ্ছে ঢাকায়। বিশৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্মাণ ক্ষেত্রগুলোর অবিরাম খটখট শব্দ। ধাতব বস্তু কাটার শব্দ, ইট ভাঙার শব্দ এবং জেনারেটরের শব্দ। এই শহরে উচ্চ শব্দের যেন কোনো লাগাম নেই। এমতাবস্থায় শহরে শান্তি বিরল হয়ে উঠেছে। শব্দদূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জরুরি। এজন্য আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় শব্দ সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকতে হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে