জলাশয় রক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে

এফএনএস | প্রকাশ: ৭ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৪৪ পিএম
জলাশয় রক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে

আমাদের দেশে অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক জলাশয় বলতে নদী, খালবিল, হাওর-বাঁওড় এবং আশপাশের উন্মুক্ত জলাভূমি ও ডোবা-নালাকে বোঝায়। যেখানে মাছসহ জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী বসবাস করে। বাংলাদেশে বিস্তৃত জলাভূমি গড়ে ওঠার কারণ নদীবাহিত প্লাবন সমভূমি গঠন। আমাদের জীবন ও প্রকৃতি নদী দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত। বাংলাদেশে একসময় প্রচুর সংখ্যক হাওর-বাঁওড়, পুকুর-ডোবাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ছিল। এসব জলাভূমিতে প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। এখন তা কমে গেছে। প্রাকৃতিক জলাশয়ও কমছে। নদীনালা, খালবিল, ডোবা, হাওর, পুকুর, জলাভূমি ইত্যাদি দখল ও দূষণের কবলে পড়ছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক জলাশয়ের বেশিরভাগই নদী-খালবেষ্টিত। অভ্যন্তরীণ মাছ কমে আসার অন্যতম কারণ নদী, খালসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ের দূষণ ও দখল। দেশের অনেক নদী, খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয় শিল্পের তরল বর্জ্য এবং নানা রকম কঠিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে মাধ্যমে দূষিত হচ্ছে। এর ফলে মাছের নিরাপদ আবাস ও প্রজননক্ষেত্র দুটোই নষ্ট হচ্ছে। এতে মাছ উৎপাদন ও বেড়ে ওঠা দুটোই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক খাল ও নদী এরই মধ্যে দখল হয়ে গেছে। এসব দখলকৃত নদী ও খালে গড়ে উঠেছে নানা রকম স্থাপনা। মাছ কমে আসার এটিও গুরুত্বপূর্ণ কারণ।  বাংলা পিডিয়ার তথ্যমতে, এ দেশের সাত থেকে আট লাখ হেক্টর ভূমি কোনো না কোনোভাবে জলাভূমির অন্তর্ভুক্ত, যা আমাদের মোট আয়তনের প্রায় ৫০ ভাগ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জীববৈচিত্র্য, কৃষি, মৎস্য, পর্যটনসহ নানা ক্ষেত্রে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো জলাভূমি। আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশে রয়েছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র ১৯৯২ সালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক ও লীলাভূমি সুন্দরবনকে প্রথম এবং ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার স্থান (রামসার কনভেনশন কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জলাভূমি) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একসময় প্রবাদ ছিল, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ, কিন্তু ধীরে ধীরে জলাশয় ভরাট হওয়ায় আমরা মাছে-ভাতে বাঙালির পুরোনো গৌরব হারিয়ে ফেলতে বসেছি। জীবন-জীবিকা ও পরিবেশের সুরক্ষা হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র রক্ষায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, হাওর-বাঁওড়সহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ছাড়া পরিবেশকে শীতল রাখা, বর্ষা মৌসুমে বন্যা প্রতিরোধ, শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন, পানির চাহিদা পূরণ ও আবর্জনা পরিশোধনে জলাভূমিগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই প্রাকৃতিক জলাভূমি সুরক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। নদী, খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয় দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। নদীর নাব্য বজায় রাখার জন্য সীমানা নির্ধারণ করে খননকাজ করতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে।  জলাভূমি সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে হবে।