চৌগাছায় পুলিশের ‘টহল দুর্বলতায়’ বাড়ছে অপরাধ

এফএনএস (এম. কে সিদ্দীক; চৌগাছা, যশোর) : : | প্রকাশ: ১৫ মার্চ, ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম
চৌগাছায় পুলিশের ‘টহল দুর্বলতায়’ বাড়ছে অপরাধ

যশোরের চৌগাছা পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি-ছিনতাইসহ হত্যাকান্ডের ঘটনা। ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে উপজেলার অপরাধ চিত্র। বিশেষ করে ওসি আনোয়ার হোসেনের যোগদানের পর থেকে উপজেলায় চুরি-ছিনতাই ও হত্যার ঘটনা বেড়েছে। পাঁচ আগষ্টের পরে উপজেলায় ছয়টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে এক মাসের মধ্যে তিনটি হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটেছে। শেষ তিনটি হত্যা কান্ডে চৌগাছা থানা পুলিশ কোনো আসামী গ্রেফতার করতে না পারা পুলিশের চরম ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে উপজেলার সাধারণ মানুষ। আর পুলিশের নিরব ভুমিকায় অপরধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আইানশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কমে আসায় অপরাধীরা বেশি সক্রিয় হয়েছে। একই সাথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং ও চোর চক্রের সদস্যরা।

গত ৩০ জানুয়ারি অপহরণের শিকার ট্রাক ড্রাইভার মিন্টু মিয়াকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ হামলার শিকার হয়। যদিও মামলার এজাহারে পুলিশ এসাল্টেরে বিষয়টি এড়িয়ে যায় ওসি আনোয়ার হোসেন।  এতে উপজেলায় পুলিশের ইমেজ সংকট তৈরি হয়।


৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় চৌগছার বিশিষ্ট স্বর্ণ ব্যবসায়ি ধীরেন্দ্রনাথ অপহরণ হয়। চৌগাছা থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। অপহরণের ৩ ঘন্টা পরে যশোর ডিবি পুলিশ চৌগাছার সলুয়া বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ধীরন্দ্রেনাথকে  উদ্ধার করে। এসময় অপহরণকাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস  ও দুই জন অপহরণকারিকে আটক করে ডিপি পুলিশ।  

২০ জানুয়ারি উপজেলার পুড়াহুদা গ্রামের ইজিবাইক চালক রকিকে হত্যা করে ইজি বাইক ছিনতাই করে কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্য। এঘটনার চার দিন পরে যশোরের পিবিআই সদস্যরা রকির লাশ উদ্ধার করে। এই অপরাধে জড়িত তিনজনকেই আটক করে পিবিআই। এঘটনায় ওসি আনোয়ারের ভুমিকা ছিল রহস্যজনক।

৮ মার্চ ভোরে উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের শরিফুল ইসলাম (৪৫) কে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে রবিন (২২)। এঘটনার দুই সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ রবিনকে গ্রেফতার করতে পারেনি।


সবশেষ ১০ মার্চ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে স্বামী রকিবুল ইসলামের লাঠির আগাতে স্ত্রী রোকসনা খাতুনের মৃত্যু হয়। এঘটনায়ও চৌগাছা থানার পুলিশ ঘাতক রকিবুল ইসলামকে আটক করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এছাড়া প্রতিবেশির ‘কু’ নজরে পড়ে ১০ ডিসেম্বর বাগারদাড়ি গ্রামের রাবেয়া বেগম (৪২) খুন হয়। ২২ অক্টোবার উপজেলার পুড়াপাড়া গ্রামে বিএনপি কর্মী শওকত আলীকে পিটিয়ে হত্যা করে আওয়ামীলীগের কর্মীরা। ২৯ অক্টোবর উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আনিছুর রহমান মাডার হয়।


স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চৌগাছা শহর ও ইপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের  কাছে চাঁদা দাবি করেছে সন্ত্রাসীরা। মাদক বেচাকেনাও বেড়েছে। এ ছাড়া আগে বড় কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশের যে তৎপরতা বা অভিযান থাকতো, সেটাও ঝিমিয়ে পড়েছে।

জানাযায় সম্প্রতি সময়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে  অর্ধশতাধিক গরু চুরি হয়েছে। প্রত্যেকটা চুরিই একই ষ্টাইলে খামারির ঘরের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে গোয়াল ঘরে ট্রাক ভিড়িয়ে গরু নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কয়েকজন খামারি বলেন, রাতে পুলিশ টহল নাথাকায় চোরেরা প্রতিনিয়ত ট্রাক ভিড়িয়ে গরু চুরি করছে। তাদের দাবি রাতে টহল থাকলে পুলিশ চুরির কাজে ব্যবহৃত ট্রাকগুলো আটকাতে পারত।

সম্প্রতি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে একাধিক বক্তা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে পুলিশের তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের মধ্যে এখন আগের মতো ভয় নেই। এর ফলে মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। পুলিশের নিস্ক্রিয়তার ফলে উপজেলায় চুরি বেড়েছে।

চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা গোলাম মোরশেদ বলেন, সম্প্রতি উপজেলায় হত্যা, চুরি, এবং চাঁদাবাজদের দৌরত্ব বেড়েই চলেছে। কিন্তু পুলিশ সন্ত্রাসীদের দমন না করে চৌগাছার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে পতিত সরকারের দোসরদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, চৌগাছা থানার পুলিশ এখনো আওয়ামীলীগের দালালি করছে। আওয়ামীলেগের সন্ত্রাসীরা শহর দাবিয়ে বেড়ালেও পুলিশের ভুমিকা নিরব। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও পুলিশ গুরুত্ব দিচ্ছেনা। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনসহ উপজেলার সকল কর্মকর্তাদের মনে এখনো আওয়ামী ভুত রয়েই গেছে। পুলিশের নিরব ভুমিকার কারনে  অসাধু চক্র উপজেলাকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

চৌগাছায় সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়েছে অস্বীকার করে ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের তৎপরতা মোটেও ঝিমিয়ে পড়েনি। চুরির কোনো খবর আমার জানা নেই। কেউ না জানালে আমি কিভাবে জানব চুরি হচ্ছে। আমরা সস্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছি। হত্যাকান্ডে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে। ঈদ উপলক্ষে টহল কার্যক্রম জোরদার করা হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে