মাদক সন্ত্রাস চাঁদাবাজি মাটিলুটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে সাতকানিয়া উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের বিক্ষুব্ধ জনতা। তাদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে ইউনিয়ন জামায়াত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম - কক্সবাজার মহাসড়কের পাশঘেঁষে কেরানিহাটের পশ্চিম পাশে অবস্থিত ঢেমশা ইউনিয়ন এলাকায় বিগত সময়ে প্রচুর বৈধ - অবৈধ ইটভাটা গড়ে ওঠে। সমগ্র সাতকানিয়ায় যত ইটের চাহিদা আছে তার চেয়ে বহু বেশী উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ইটভাটায় ভরে গেছে ঢেমশা ইউনিয়ন। ফলে কমে গেছে কৃষি জমি। সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের। এসব ইটভাটায় ইট প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি সরবরাহ করতে গড়ে ওঠে বিশাল মাটি সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়ন্ত্রণ করতো নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের ক্যাডাররা। তারা বিভিন্ন এলাকার সশস্ত্র সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, মাদক পাচারকারীদের সহায়তায় ঢেমশাসহ বিভিন্ন এলাকার টপসয়েল জোরপূর্বক বা নামেমাত্র মূল্য দিয়ে কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যায়। কিন্তু ঢেমশা এবং আশপাশের এক সময়ের উর্বর কৃষিভূঁই হয়ে যায় অঘোষিত অকেজো লেক। জমির মালিক এবং কৃষকেরা আন্দোলনে নেমেও ফ্যাসিস্টদের কারণে সফল হয়নি।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বিগত ৫ আগস্ট আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর আওয়ামী মাটি সিন্ডিকেটের হোতারা পালিয়ে গেলে কিছুদিন এই মাটি সন্ত্রাস বন্ধ ছিল। কিন্তু বিগত কিছুদিন ধরে আবার নতুন সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। তারা নিজেদেরকে বিভিন্ন দলের ত্যাগী কর্মী পরিচয় দিয়ে প্রভাব সৃষ্টি করে আওয়ামী সিলসিলা অব্যাহত রেখে ঢেমশা ইউনিয়নের হাঙ্গর খালসহ বিভিন্ন বিলের মাটি লুট করে ইটভাটায় বিক্রি করতে শুরু করে। এতে পরিবেশ আবারো মারাত্মকভাবে বিপর্যস্থ হওয়ায় আন্দোলনে নেমেছে ঢেমশাবাসী।
সরেজমিন পরিদর্শণে জানা যায়, মাটি লুটেরারা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের ভিটেমাটিও কেটে নিয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, এতে ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন সদস্যও জড়িত রয়েছে।
বিক্ষুব্ধ জনতা জানায়, তারা মাটি সন্ত্রাস বন্ধের জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে প্রত্যাশিত সহযোগিতা না পেয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
গত ১১ এপ্রিল ঢেমশা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স এলাকায় ইউনিয়নের সর্বস্থরের জনগণের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢেমশা ইউনিয়ন জামায়াত আমীর মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন, সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাবেদ, সমাজসেবক ডাক্তার আব্দুর রহিম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ঢেমশা ইউনিয়নে কোনো ধরণের অবৈধ মাটি কাটা চলবে না। এছাড়া তারা মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও কিশোর গ্যাং এর উৎপাত কঠোরভাবে দমনের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। তারা আরো বলেন, জামায়াতের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অপকর্মের চেষ্টা করলে তাকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাতকানিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারিস্তা করিম বলেন, "ঢেমশায় মাটি কাটার অভিযোগে আমি একজনকে ধরেছিলাম। আর্মিকে বলে দেয়া আছে। মাটি কাটার খবর পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।"