পিরোজপুর এলজিইডিতে ১ হাজার ৭৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় ৭টি পৃথক মামলা করেছে। ওই মামলায় পিরোজপুর-২ আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় সদ্য সাবেক এমপি পিরোজপুর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ, তার ভাই ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম, তার স্ত্রী শামীমা আকতার অন্য ভাই মোঃ শামসুদ্দিন, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীসহ পদস্থ প্রকৌশলী এবং পিরোজপুর ডিস্ট্রিক্ট একাউন্টস অফিসের একাধিক কর্মকর্তাসহ ২৩ জনকে আসামী করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) মোঃ আমিনুল ইসলাম মামলা ৭টি দায়ের করেন। এদের মধ্য থেকে বুধবার রাতে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এব্যাপারে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টায় দুদক পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে এক প্রেসব্রিফিং করা হয়।
মামলার এজাহার ও ব্রিফিং এ বলা হয় গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন, পল্লী সড়ক ও কালভার্ট মেরামত এবং উপজেলা শহর (নন মিউনিসিপ্যাল) মাস্টার প্ল্যান প্রনয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো প্রকল্পের কোনো কাজ না করে আসামী মহারাজ-মিরাজের পরিবারের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইফতি এন্টারপ্রাইজ, ইটিসিএল, শিমু এন্টাপ্রাইজ, সাউথ বাংলা ইন্টারন্যাশনাল, হরিণপালা এন্টারপ্রাইজসগহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ৩৭৯ টি ভুয়া স্কীম দেখিয়ে এলজিইডি ও জেলা একাউন্টস অফিসের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে ওই বিপুল অংকের টাকা আত্মসাত করা হয়।
মামলায় অপর উল্লেখযোগ্য আসামীরা হলেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী (পিআরএল) আলী আখতার হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আ: রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল ইসলাম, শেখ মোঃ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নুরুল হুদা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আঃ রশীদ, অবসরপ্রাপ্ত মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক ইব্রাহীম খলিল, সুশান্ত রঞ্জণ, পিরোজপুর এলজিইডি অফিসের হিসাবরক্ষক একেএম মোজাম্মেল হক খান, পিরোজপুর ডিস্ট্রিক্ট এ্যাকাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসার মোঃ মোহাসীন, এসএএস সুপার মোঃ মাসুম হাওলাদার ও নজরুল ইসলাম, সাবেক ডিস্ট্রিক্ট এ্যাকাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসার মোঃ আলমগীর হাসান। এদের মধ্যে শেষোক্ত ৫ জনকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠালে আদালত তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
মামলার বিবরনে জানা গেছে মহারাজ-মিরাজ পিরোজপুর জেলার প্রায় সবকটি উপজেলায় গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তা, পুল, কালভার্ট নির্মান ও মেরামতের নামে ৩৭৯ টি ভুয়া স্কীম তৈরি করে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের মিথ্যা ফরোয়ার্ডিং ব্যবহার করে মিথ্যা বিল প্রস্তুত করে পিরোজপুর একাউন্টস অফিসের যোগাযোগীতে ভুয়া বিল পাশ করিয়ে কোনো স্কীমের কোনো কাজ না করে ওই বিপুল অংকের টাকা আত্মসাত করে। মামলায় বলা হয় মিরাজ-মহারাজের বাড়ী ভান্ডারিয়া উপজেলায়ই ওই রকম ৬৪ টি ভুয়া স্কীম তৈরি করা হয়। এমনকি ওই সব কাজের জন্য যে নথি তৈরি করা হয় সেগুলোও অফিস থেকে গায়েব করা হয়েছে। উল্লেখ্য ২৪ এর ৫ আগস্টের মিরাজ-মহারাজ আত্মগোপনে আছেন।
ডিডি মোঃ আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশব্যাপী আলোচনায় আসে পিরোজপুর এলজিইডি অফিস। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগ ও এলজিইডির প্রধান কার্যালয় থেকে বেশ কয়েকটি তদন্ত টিম পিরোজপুর এলজিইডি অফিসে ব্যাপক দুর্নীতির প্রমান পায়। কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ওই টাকা পরিশোধ করা এবং এক হাজার ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে গরমিল পায় তদন্ত কমিটি। সর্বশেষ দুদক বিষয়টি তদন্ত করে পিরোজপুর এলজিইডি অফিস ও জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসেই সীমাহীন ওই দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।