ইউক্রেনে তিন দিনের জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনের বিবৃতি অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় দিবস উদযাপনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই যুদ্ধবিরতি ৮ মে সকাল থেকে ১১ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। যুদ্ধক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাশিয়া আশা করছে ইউক্রেনও এই যুদ্ধবিরতির উদাহরণ অনুসরণ করবে। তবে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যদি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে, তাহলে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ‘উপযুক্ত ও কার্যকর জবাব’ দেবে। পাশাপাশি, রাশিয়া পুনরায় শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে শর্তহীন প্রস্তুতির কথাও ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য ইউক্রেন সংকটের মূল কারণগুলো দূর করা এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা গড়ে তোলা।
তবে ইউক্রেন পুতিনের এই প্রস্তাবকে যথেষ্ট মনে করছে না। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিগা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) লিখেছেন, ‘‘যদি রাশিয়া সত্যিই শান্তি চায়, তাহলে এখনই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা উচিত, ৮ মে পর্যন্ত অপেক্ষা কেন?’’ ইউক্রেন অন্তত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে, যাতে একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি হয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও পুতিনের ঘোষণায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পক্ষে। তিনি স্পষ্ট করেছেন, তিন দিনের নয়, বরং হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দেখতে চান। তিনি দুই দেশের নেতাদের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন, এখন সময় হয়েছে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতায় পৌঁছানোর।
এর আগে, খ্রিস্টানদের ইস্টার উৎসব উপলক্ষে রাশিয়া ৩০ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও তা কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল। উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল। অতীতেও ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ২০ বারের বেশি যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো কার্যকর হয়নি বা ভেঙে পড়েছে কয়েক মিনিটের মধ্যেই।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে। প্রায় দুই বছরের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে। রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড, যার মধ্যে দক্ষিণের ক্রিমিয়া উপদ্বীপও রয়েছে, নিয়ন্ত্রণ করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পুতিনের এই তিন দিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা মূলত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রাশিয়ার ‘শান্তিকামী’ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা। বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে এবং ওয়াশিংটন থেকে চাপ বাড়ানো হচ্ছে দ্রুত সমাধানের জন্য। তবে তিন দিনের ক্ষণস্থায়ী বিরতি যুদ্ধের প্রকৃত অবসানের পথ খুলে দেবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।