ভারতকে থামান: জাতিসংঘকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

এফএনএস অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম
ভারতকে থামান: জাতিসংঘকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকেভারতকে থামানোরঅনুরোধ জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। একইসঙ্গে নয়াদিল্লিকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাতেও বলেন তিনি।

ইসলামাবাদ থেকে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানায়, মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। আলোচনায় দুই নেতা দক্ষিণ এশিয়ার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

শাহবাজ বলেন, ‘ভারতের কোনো দুর্ভাগ্যজনক আচরণের জবাবে পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে।তিনি জোর দিয়ে বলেন, সিন্ধু নদীর পানিকে অস্ত্র বানানোর যে প্রয়াস ভারত নিচ্ছে, তা পাকিস্তানের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

গত ২২ এপ্রিল  পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যুর পর ভারত পাকিস্তানকে দোষারোপ করে। তবে অভিযোগকেভিত্তিহীনউল্লেখ করে শাহবাজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ আন্তর্জাতিক মানের তদন্তের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন।

পাকিস্তানের প্রধানন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করি না। বরং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে আমরা ব্যাপক ত্যাগ স্বীকার করেছি।একইসঙ্গে কাশ্মীরিদের স্বাধীনতা আন্দোলনকেসন্ত্রাসবাদআখ্যা দিয়ে দমন করার ভারতীয় কৌশলকে হতাশাজনক বিভ্রান্তিকর হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

শাহবাজ বলেন, ‘কাশ্মীরে ভারতের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত দমনুপীড়নই আসল সন্ত্রাস। অথচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে তারা পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করছে।

তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেন, সিন্ধু অববাহিকার পানিকে পাকিস্তানের ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের জীবনীশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারত যদি পানি নিয়ে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়, তবে তা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল বলে গণ্য হবে।

আলোচনায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারতুপাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার ক্রমবর্ধমান গতিপথে গভীর উদ্বেগ জানান এবং সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি দুঃখজনক পরিণতির দিকে যেতে পারে।উত্তেজনা হ্রাসে গুতেরেস নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানান।

এদিকে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, মহাসচিব ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে আলাপ করেছেন। তিনি উভয় পক্ষকে আইনি পথে ন্যায়ের পথ অনুসরণের ওপর গুরুত্বারোপ করতে বলেছেন।

এদিকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরীফ জানিয়েছেন, পাকিস্তান যেহেতু ‌‘পারমাণবিকশক্তিধর দেশ তাই এত সহজে দেশটিতে কেউ আক্রমণ করতে পারবে না সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে তথ্য জানানো হয়। দ্য ডনের  প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এক অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরীফ বলেন, পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ আল্লাহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে দেশ রক্ষার শক্তি দিয়েছেন। পাকিস্তানের যেকোনো শত্রু আক্রমণ করার আগে ১০বার ভাববে। সবাই জানে যে পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অবস্থান যাই হোক না কেন, আমাদের অবশ্যই ইস্পাতের প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

 অন্যদিকে পেহেলগাম হামলায় জড়িত মদতদাতাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি সন্ত্রাসী তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করব এবং এমন শাস্তি দেব, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার। ১৪০ কোটি মানুষের দৃঢ় সংকল্প সন্ত্রাসের মদতদাতাদের চূর্ণ করে দেবে।

 

কোথায় রাখা আছে পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা?

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের। সাম্প্রতিক সময়ের এই উত্তেজনায় উভয় দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনাও জোরদার করেছে।

এরই মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, পাকিস্তানে হয়ত ভারত হামলা চালাতে পারে। তবে ভারত যদি হামলা চালায় তাহলে প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে পাল্টা হামলা চালানো হবে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এমন হুমকির পর থেকেই পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

পাকিস্তান অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে তাহলে কী হবে নিয়েও চলছে নানা আলাপ-আলোচনা। ছাড়া দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র কোথায় রাখা আছে যেন এখন আলোনার মূল বিষয় হয়েছে।

২০২৩ সালেফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্সেস’ (FAS) পাক পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে বিস্তারিত কিছু তথ্য জানিয়েছিল। সংস্থাটির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল, কোথায় এই অস্ত্রগুলো (সম্ভাব্য) রাখা আছে। তারা আরও বলেছিল, পাকিস্তান বছরে নতুন করে ১৪ থেকে ২৭টি পারমাণবিক অস্ত্র নিজেদের ভাণ্ডারে যুক্ত করার কাজ করছিল। ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কাছে ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। অপরদিকে একই সময়ে ভারতের কাছে ছিল ১৮০টি অস্ত্র।

সংস্থাটি জানিয়েছিল, পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্রগুলো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গোপনে সংরক্ষণ করে থাকে, যাতে একযোগে সব অস্ত্র ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকি না থাকে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটির নাম জানা গেছে, যেগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র মজুত থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

 

. মাশরুর বিমান ঘাঁটি : এটি করাচির নিকটে অবস্থিত এবং পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। এখান থেকে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম মিরাজ-টু এবং মিরাজ-থ্রি যুদ্ধবিমান পরিচালিত হয়।

. সর্গোধা (Sargodha) ঘাঁটি : পাঞ্জাব প্রদেশের এই ঘাঁটি পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের অধীনে পরিচালিত হয়। এখানে পারমাণবিক কৌশলগত অস্ত্র সংরক্ষণ ব্যবহার সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে মনে করা হয়।

. কামরা (Kamra) বিমান ঘাঁটি : এটি পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান বিমান নির্মাণ রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র। এখানেও পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধবিমান মোতায়েনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

. গজনি খুশাব ঘাঁটি : কিছু উপগ্রহচিত্র বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পাকিস্তান এই অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য গোপন ভূগর্ভস্থ বাংকার নির্মাণ করেছে।

অস্ত্র বহনের মাধ্যম : পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে, যেমন :

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র : হাতফ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র (Hatf I থেকে Hatf VII পর্যন্ত) পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। এর মধ্যে শাহীন- শাহীন- সর্বাধিক শক্তিশালী।

 

যুদ্ধবিমান : মিরাজ-III মিরাজ-V বিমান পারমাণবিক অস্ত্র বহনে ব্যবহৃত হয়। অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমান চীন এবং পাকিস্তান যৌথভাবে নির্মাণ করেছে এবং এখন পাকিস্তান নিজেই এটি উৎপাদন করে থাকে।

ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার অস্ত্র : ভারতীয় সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলায় স্বল্প পাল্লার ট্যাকটিক্যাল অস্ত্র তৈরি করেছে পাকিস্তান, যার মধ্যে রয়েছে NASR (Hatf-IX) ক্ষেপণাস্ত্র।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা এখনও মূলত সামরিক বাহিনীর অধীনে রয়েছে এবং বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ সীমিত। ফলে সংকটকালে হঠাৎ প্রতিক্রিয়াশীল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ পাকিস্তানে এখনও একটি বড় হুমকি, যার কারণে পারমাণবিক অস্ত্রের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ আছে।