জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি ও বিচার বিভাগের জবাবদিহিসহ একাধিক সংস্কারমূলক প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে আয়োজিত বৈঠকে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি। ইসির মেয়াদকালীন বা পরবর্তী সময়ে ওঠা যেকোনো অভিযোগ এই কাউন্সিলের অধীনে তদন্তযোগ্য বলে মত দেয় দলটি।
সরোয়ার তুষার বলেন, "সংসদীয় কমিটির অধীনে তদন্তের বিষয়ে আপত্তি থাকায় আমরা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম তদন্তের প্রস্তাব করছি।"
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়েও এনসিপি একটি কাঠামোগত প্রস্তাব দেয়। তারা সংসদের দুই কক্ষ ছাড়াও ৬৪টি জেলাভিত্তিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করে, যেখানে প্রতি জেলায় একটি ভোট থাকবে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও দেয় তারা।
তাদের মতে, এর মাধ্যমে কেনাবেচার সম্ভাবনা কমে আসবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো ক্লিন ইমেজের প্রার্থী বেছে নিতে বাধ্য হবে।
সরোয়ার তুষার বলেন, "সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি বছর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। বর্তমান প্রস্তাবে তিন বছরে একবার করার কথা বলা হলেও, আমরা চাই প্রতিবছর এই প্রক্রিয়া হোক।"
তারা জানান, বিচার বিভাগের জন্যও প্রতিবছর আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব বিষয়ে তদন্ত করতে পারবে।
গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে বিরোধী দলীয় সদস্যদের রাখার প্রস্তাব দেয় এনসিপি। তারা মনে করে, সরকারি হিসাব, জনপ্রশাসন, পরিকল্পনা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো সংবেদনশীল কমিটিতে বিরোধী দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতা বাড়বে।
সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে এনসিপি চায়, গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট বাধ্যতামূলক হোক। তারা স্পষ্টভাবে বলে, "পাওয়ার স্ট্রাকচার বা মৌলিক নীতির মতো ইস্যুতে গণভোট ছাড়া সংশোধন হওয়া উচিত নয়। তবে রুটিন সংশোধনের ক্ষেত্রে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটই যথেষ্ট।"
নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ বাড়াতে তারা ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারী প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রস্তাব দেয়। উচ্চকক্ষে নারী প্রতিনিধিত্ব কমপক্ষে ২৫ শতাংশ রাখার কথাও বলে দলটি।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের কাঠামো সংরক্ষণ ও শক্তিশালীকরণে জেলা পরিষদ বহাল রাখা এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ বহাল রাখার পক্ষে তারা মত দেয়। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেন তারা।
• জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবের বিপক্ষে মত দেয় এনসিপি। তারা মনে করে, বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা শুধুই বিচার বিভাগের হাতে থাকা উচিত।
• প্রাদেশিক সরকার গঠন না করে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পক্ষে দলটি।
• ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে পৃথক বিভাগ ঘোষণার প্রস্তাবকে সমর্থন জানায় এনসিপি।
• স্বতন্ত্র ভূমি আদালত গঠনের প্রস্তাবকে নীতিগতভাবে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করে তারা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে আরও ছিলেন সদস্যসচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মনির হায়দার।