এপ্রিলে সড়কে ৫৮৮ মৃত্যু: থামছে না মৃত্যুর মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১১ মে, ২০২৫, ০২:৫৬ পিএম
এপ্রিলে সড়কে ৫৮৮ মৃত্যু: থামছে না মৃত্যুর মিছিল

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশের সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৮৮ জন। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মাসজুড়ে মোট ৫৯৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে আহত হয়েছেন আরও ১,১২৪ জন। প্রাণহানির এই মর্মান্তিক চিত্র আবারও প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থা এখনও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ২২৯ জন, যা মোট নিহতের প্রায় ৩৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ছিল ৩৬.৭৬ শতাংশ। এছাড়া ১১৬ জন পথচারী এবং ৭৪ জন চালক ও সহকারীও নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ৮৬ জন এবং শিশু ৭৮ জন, যা যথাক্রমে ১৪.৬২ শতাংশ ও ১৩.২৬ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭৩টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৫৪ জনের। চট্টগ্রামে ৩৫টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৬ জন। অন্যদিকে, রংপুর বিভাগে সবচেয়ে কম ৩১টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩২ জন। নীলফামারী জেলা ছাড়া অন্য সব জেলাতেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী ঢাকায় ৩৪টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৯ জনের, আহত হয়েছেন ২৭ জন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন

বেপরোয়া গতি

চালকের অদক্ষতা ও মানসিক অস্থিরতা

সুনির্দিষ্ট বেতন ও কর্মঘণ্টার অভাব

স্বল্পগতির যান চলাচল মহাসড়কে

তরুণদের বেপরোয়া বাইক চালানো

ট্রাফিক আইন অমান্য

দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সীমাবদ্ধতা

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা রোধে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তা হলো:

দক্ষ চালক তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও নিয়োগে নজরদারি

চালকদের বেতন ও কাজের সময় নির্ধারণ

বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি

ট্রাফিক আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা

মহাসড়কে স্বল্পগতির যান নিষিদ্ধ ও পৃথক সার্ভিস রোড নির্মাণ

রোড ডিভাইডার স্থাপন

গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন

প্রতিদিন গড়ে ১৯.৬ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সড়কে— যা আগের মাসের তুলনায় কিছুটা বেশি। গত মার্চে ৫৮৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৬০৪ জন। অধিকাংশ দুর্ঘটনার পেছনে দায়ী ‘অতিরিক্ত গতি’, যা রোধে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি, যেমন— স্পিড সেন্সর, সিসিটিভি ও জিপিএস ব্যবহার এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।

এছাড়া চালকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয় বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে