দেশের অর্থনীতি এখন কঠিন গোলকধাঁধায়

এফএনএস | প্রকাশ: ২৯ মে, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
দেশের অর্থনীতি এখন কঠিন গোলকধাঁধায়

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পাওয়া যাবে কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে ২০২২ সালে আইএমএফের দ্বারস্থ হয় তৎকালীন সরকার। সে-সময় নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দেয় সংস্থাটি। পরে ৩ কিস্তিতে ছাড় হয় ২৩১ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর, গেলো ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ঘুরে যায় আইএমএফ মিশন। সে সময় ডলারের বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার নির্ধারণ না করা, ৬৩ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে না পারা আর ভর্তুকি কমানোর প্রশ্নে অসন্তোষ প্রকাশ করে মিশন। শঙ্কা তৈরি হয় ঋণের বাকি অর্থ ছাড় নিয়ে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট কাটাতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণের প্রথম কিস্তি গ্রহণ করে বাংলাদেশ। আগামী জুনে মিলতে পারে ঋণের ৪র্থ ও ৫ম কিস্তির অর্থ। তবে এর জন্য রাজস্ব আদায় বাড়াতে সব ধরনের কর ছাড়ের শর্ত জুড়ে দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়াও ঋণ কর্মসূচির অধীনে বেশকিছু শর্ত ও সংস্কার বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিষয়টি দেশের অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতিকে আরো প্রকট করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখা এবং বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য এই ঋণের অপরিহার্যতা স্পষ্ট। অন্যদিকে আইএমএফের কঠিন শর্তাবলি, বিশেষত মুদ্রা বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব সরকারকে গভীর চিন্তায় ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে ঋণপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক দুর্বলতা এই দুইয়ের সমন্বয়ে দেশের অর্থনীতি এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি কিছুটা স্বস্তি দিলেও উৎপাদন ও রপ্তানি খাতের দুর্বলতা সুস্পষ্ট। বিনিয়োগের অভাব এবং ব্যবসায়ীদের হতাশা অর্থনৈতিক সংকটকে আরো ঘনীভূত করছে। রাজস্বের বেশির ভাগ অর্থই ব্যয় হচ্ছে ঋণের সুদ পরিশোধে। পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি মন্দা এবং নিত্যপণ্যের বাজারের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আর আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনকালে ব্যাপক দুর্নীতি, বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এখন বাংলাদেশকে তার ভবিষ্যৎ পথ ঠিক করতে হবে। ঠিক করতে হবে- কোন পথে যাবে অর্থনীতি। অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে গেলে সেটা চালু হওয়া বেশ কঠিন। আমাদের লক্ষ্য হবে অর্থনীতিকে যত দ্রুত সম্ভব গতিশীল করা। আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে