বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থাই সহজ করে না, বরং এলাকার আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্যও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা থেকে বেড়িরহাট পর্যন্ত সড়ক সংস্কার প্রকল্প নিয়ে যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা কেবল হতাশাজনকই নয়, বরং জনস্বার্থ উপেক্ষার চরম উদাহরণ। মাত্র ১৫০ মিটার কার্পেটিংয়ের একদিন পরেই সড়কের পিচ হাত দিয়ে তুলে ফেলা যাচ্ছে-এ তথ্য শুধু নির্মাণের মান নয়, বরং সমগ্র তদারকি ব্যবস্থার ব্যর্থতাকে নগ্ন করে প্রকাশ করে দিয়েছে। ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭০০ মিটার সড়ক উন্নয়নের কথা থাকলেও, কাজের গুণগত মানের এমন চিত্র একদিকে জনসাধারণের অর্থের অপচয়, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার জোরালো প্রমাণ। এলাকাবাসীর অভিযোগ এবং ঘটনাস্থল প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট-এই অনিয়ম একদিনের নয়, বরং শুরু থেকেই নিম্নমানের উপকরণ ও গাফিলতির বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করে আসছিলেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, দোকানি থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারীও বিষয়টি নজরে আনলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা গুরুত্ব দেননি। বরং ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর দায় এড়াতে ‘স্থানীয়দের ভুল বোঝা’ বলে উল্লেখ করেন প্রকৌশলী, যা আরও উদ্বেগজনক। যেখানে জননিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের প্রশ্ন, সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এলজিইডির পক্ষ থেকে দায়সারা বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি সড়কের পিচ এক দিনের ব্যবধানে উঠে যাওয়ার মতো ঘটনা প্রমাণ করে, সেখানে পরিদর্শন, মান যাচাই এবং কার্যাদেশ বাস্তবায়নে নজরদারি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল। এই ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি। প্রয়োজন হলে প্রকল্পটি পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন করে কাজের নির্দেশ দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও তদারককারী কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। নয়তো ‘উন্নয়ন’ কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে, বাস্তব মাটি ও মানুষের জীবন থেকে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। প্রকৃত অর্থে গ্রামীণ উন্নয়ন তখনই সফল হয়, যখন তা স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে। স্থানীয় জনগণ এই অনিয়মের বিরুদ্ধে যেভাবে সোচ্চার হয়েছেন, তা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু তাদের কথা শুধু শোনা নয়-ব্যবস্থা নেওয়াও এখন সময়ের দাবি।