বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কেমিকেল ল্যাবের 'স্পেকট্রোফটোমিটার' মেশিনটি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে আমদানিকৃত পণ্যের কেমিকেল মান যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে শিল্পের কেমিক্যাল জাতীয় কাচামাল খালাশ করতে বিলম্ব হচ্ছে, পণ্য ডেলিভারিতে দেখা দিচ্ছে জটিলতা।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, এলসির তথ্য অনুযায়ী কোনো পণ্যে বিষাক্ত বা ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে কিনা তা যাচাইয়ে ল্যাবের এই যন্ত্রটি অত্যন— গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।
বেনাপোল কাস্টমস ল্যাবের জন্য বরাদ্দকৃত দুটি যন্ত্রের মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এর ফলে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠাতে হচ্ছে চট্টগ্রাম বা ঢাকায়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়সাপেক্ষ।
আমদানিকারকরা বলছেন, পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠাতে গিয়ে দেরি হচ্ছে এবং অতিরিক্ত খরচও গুনতে হচ্ছে। এতে বন্দর এলাকায় পণ্যজট বাড়ছে, ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কেমিক্যাল বিষেশজ্ঞ তপন কুমার জানান, কেমিক্যাল পণ্যের শ্রেণিভুক্তি যদি দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে, তাহলে শিল্পে কাঁচামালের ঘাটতি হবে। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, বাজারে পণ্যের দামও বাড়বে। তেল, সাবান, কসমেটিকস, খাদ্যশিল্পসহ অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই কেমিক্যালের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, আমদানি খাতে জটিলতা তৈরি হলে তার প্রভাব সরাসরি পড়ে দেশের শিল্পে এবং শেষ পর্যন— সাধারণ ভোক্তার ওপর। আমরা একাধিকবার কাস্টমস হাউস কতৃপক্ষকে বলেছি। কেমিকেল ল্যাবের নস্ট 'স্পেকট্রোফটোমিটার' মেশিনটি মেরামত করতে ১৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। ফান্ডের অভাবে মেশিনটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
বেনাপোল আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু জানান, এনবিআরের একটি নির্দিষ্ট টেকনিক্যাল কমিটি আছে, যারা কেমিক্যাল শ্রেণিভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান— দিয়ে থাকে। কিন্তু বেনাপোল কাস্টমস হাউস থেকে বারবার অনুরোধের পরও কমিটির সভা হচ্ছে না। ফলে মেশিনটি মেরামত করা সম্ভ হচ্ছে না। বাড়ছে ব্যবসায়ীদের হয়রানির মাত্রা।
বেনাপেল সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ জানিয়েছি কাস্টমস কে মেশিনটি দ্রুত মেরামতের জন্য কিন— গত ১ বছরেও সেটি সম্ভব হয়নি। আমরা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি, দেশের শিল্প বাঁচাতে কাজ করছি অথচ আমরাই বাধার মুখে পড়ছি। দেশের আমদানিকৃত মোট পণ্যের প্রায় ৪০ শতাংশই কেমিক্যাল জাতীয় পন্য আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এগুলো ছাড়া শিল্প খাতে উৎপাদন অসম্ভব।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার শরিফুল ইসলাম জানান, আমরা ল্যাবের 'স্পেকট্রোফটোমিটার' মেশিনটি মেরামতের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পত্র দিয়েছি। আশা করি মেশিনটি দ্রুত মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, বেনাপোল বন্দরের কেমিকেল ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে ২৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই শিল্প পণ্য।