ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে তৎপরতা বাড়ান

এফএনএস | প্রকাশ: ২৬ জুন, ২০২৫, ০৭:০৫ পিএম
ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে তৎপরতা বাড়ান

ডেঙ্গু ভাইরাস এডিস ইজিপ্টি নামক মশার কামড়ে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। প্রতিবছরই বাংলাদেশে বর্ষা ও গ্রীষ্মকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। মে মাসে এই বৎসরের সর্বোচ্চ আক্রান্ত দেড় সহস্রাধিক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঋতুচক্রের নিয়ম অনুসারে বর্ষা আসার পূর্বে গ্রীষ্মেও বৃষ্টিপাত বিরল নয়। এইবার নিম্নচাপের কারণে ঢাকাসহ সমগ্র দেশেই বর্ষণ হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ভ্যাপসা গরমও। বিশেষজ্ঞগণের অভিমত, এইরূপ আবহাওয়া এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য খুবই অনুকূল।  ভাইরাসজনিত এ রোগ, প্রতিবছর অনেক মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলে। তাই এই রোগের ভয়াবহতা, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু সাধারণত ৫-৭ দিন স্থায়ী হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক রূপ নিতে পারে। মারাত্মক অবস্থায় ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, রক্তপাত হয় এবং প্লাটিলেট কমে যায়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ হঠাৎ কমে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও লিভার, কিডনি ও হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি হতে পারে। এমন সব পরিণতি থেকে বাঁচতে ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূলমন্ত্র হলো মশার বিস্তার রোধ এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার থাকলেও অন্যত্র থেকে আক্রান্ত হয়ে আসা অস্বাভাবিক নয়। তাই মশার কামড় থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা জরিপ করে দেখেছে, গত বৎসরের মে মাস অপেক্ষা এবারের মে মাসে মশার ঘনত্ব যদ্রূপ অধিক, তদ্রূপ রোগীও অধিক। তাই তাদের আশঙ্কা, এই বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঢাকায় তো বটেই, ঢাকার বাহিরের কিছু জেলায় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। উদ্বেগটা হয়ত এই পর্যায়ে যেত না যদি বিশেষত সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সময় থাকতে তৎপর হতো। ডেঙ্গু বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও অনেকাংশেই উপেক্ষিত সেই নির্দেশনা। ঢাকার কোনো হাসপাতালে পৃথক ডেঙ্গু ইউনিট স্থাপিত হয়নি। অদ্যাবধি এডিস মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও বৃহদাকারে কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। চট্টগ্রাম ও অন্যান্য সিটি করপোরেশনও অনুরূপ ঔদাসীন্য প্রদর্শন করছে। কোনো সংক্রমিত রোগ হানা দেওয়ার আগে যে সতর্কতা থাকে, তা আমলে নেওয়া হয় না বললেই চলে। ফলে এর ভুক্তভোগী হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এবার বরগুনার ক্ষেত্রেও সেটি দেখা গেল। আগাম সতর্কতা দেওয়ার পরও সেখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সচেতনতাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের হাতিয়ার। ডেঙ্গু কোনো সাধারণ জ্বর নয়, এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে বরগুনাসহ ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশেষ মেডিকেল টিম, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, ওষুধ এবং আইসোলেশন বেড সরবরাহ করতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও অধিক তৎপর হতে হবে।