কালীগঞ্জ ঝিনাইদহসহ গ্রামাঞ্চলে অনলাইন জুয়ার আসক্তি ত্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জুয়া খেলার প্রবনতা কিশোর, যুবক ও নারীদের মাঝে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনলাইন জুয়ার আসক্তি দিনকে দিন ভয়াবহ রুপ ধারণ করলেও স্থাণীয় প্রশাসন কোন প্রতিকার গ্রহন করে না। টাকার লোভে মানুষ অনলাইন জুয়ায় লগ্নি করে সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে।এদিকে জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে হতাশায় আত্মহত্যার ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।ফলে মোবাইল অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ কারীদের কাছে জুয়ার মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কালীগঞ্জের এক মহিলা অনলাইনে জুয়া খেলে নগদ টাকা ও নিজের বাগি পর্যন্ত হারিয়েছিল। কোটচাঁদপুর উপজেলার পারলাট গ্রামের মেহগনী বাগানে অভিযান চালিয়ে জুয়া খেলার সরঞ্জাম, বাংলা মদ ও নগদ টাকাসহ ৮ জুয়াড়ীকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় জুয়ার বোর্ডের মালিক হারুনসহ অন্যান্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আকটকৃতা হলেন, কোটচাঁদপুরের সলেমানপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে সেলিম, পারলাট গ্রামের ওয়াহাবের ছেলে বাবর আলী, আব্দুল কাদেরের ছেলে আসাদুল হক, ঝিনাইদহ নতুন কোর্টপাড়ার আইয়ুব মুন্সির ছেলে শাহিন,কালীগঞ্জ উপজেলার হেলাই গ্রামের ফকির আহম্মেদের ছেলে রবিউল ইসলাম, একই গ্রামের সাহাজ উদ্দীনের ছেলে মনির উদ্দীন, কোটচাঁদপুর আদর্শপাড়ার মালেক সরদারের ছেলে অমেদুল সরদার ও সদর উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের নাওশাদ শাহার ছেলে আহসান হাবিব। এসময় ১৩ হাজার ৬৫৯ টাকা, জুয়ার ওয়ানটেন বোর্ড, ডার্ক পিন, জুয়ার গুটি, মদ, মোমবাতি, গোলাপ পানি ও বেশ কয়েকটি মোবাইল সেট জব্দ করে। এসব জুয়ার বোর্ডে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়াড়িরা অংশ নিয়ে থাকে। এলাকার মানুষ প্রলোভিত হয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে অনলাইনে টাকা উপার্জনের নেশায়। উপজেলার গান্না এলাকায় জুয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে লালু মিয়া নামে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে। স্ত্রী ও তার ছোট ছোট তিন সন্তান এখন নিরুপায় হয়ে পড়েছে। এছাড়া ঋণগ্রস্থ হয়ে বাড়ি ছাড়া ও দাম্পত্য কলহের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে জেলায় বিভিন্ন স্থনে। অনলাইনে টিকে-৭৭৭, জয়া-৯৯৯, ক্যাসিনো-৭৭৭, হাউজ অব ফান, লুডো কিং, তিন পাত্তি গোল্ড, ২৯ গোল্ড কার্ড গেম, বেট কুইন ও ৩৬৫ বেটসহ অসংখ্য জুয়ার অ্যাপে আসক্ত হয়ে পড়ছে সব বয়সের মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ার চটকদার বিজ্ঞাপণের জন্য ব্যবহার করা হয় জনপ্রিয় তারকা, ক্রিকেটার, রাজনৈতিক নেতার ছবি। উপজেলার বেতাই গ্রামের নিলুফা খাতুন জানান, তার স্বামী লালু মিয়া মোবাইল জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। জুয়া খেলতে গিয়ে সে গরু বিক্রি ও জমি বন্ধক রাখে। জাগরণী চক্র সহ ৪টি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা দিয়ে জুয়া খেলে হেরে যায়। অবশেষে ঋণের বোঝার চাপে সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। ছোট-ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে মহাকষ্টে পড়েছেন নিলুফা খাতুন। মুদি ব্যবসায়ী কবির হোসেনের দোকানে প্রতিদিন দেড়-দুই লাখ টাকা বেচাকেনা হতো। জুয়াড়ি যুবকদের প্ররোচনায় তিনি জুয়া খেলতে শুরু করেন। জুয়া লাভজনক ভেবে তিনি জনতা ব্যাংক থেকে সিসি ঋণ নিয়ে ১৫ লাখ টাকা জুয়ায় হেরে যায়। কবির হোসেন বলেন, জুয়ার নেশায় আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমার কিছুই নেই। চান্দেরপোল গ্রামের তাইজেল হোসেনের ছেলে রেজাউল ইসলাম তরকারির দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনিও অনলাইন জুয়া খেলায় ৮০ হাজার টাকা হেরেছেন। রেজাউল ইসলাম বলেন, শুনেছিলাম মোবাইলে খেলা করে অনলাইনে টাকা উপার্জন করা যায়। সেই জন্য জুয়ার অ্যাপস মোবাইলে নিয়ে খেলতে শুরু করি। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। ঝিনাইদহ জেলার অনেক বাজারে কিছু যুবক নিজস্ব এ্যাপস বানিয়ে জুয়ার রমরমা আসর বসিয়েছে। জুয়া খেলে নিঃস্ব যুবকরা ঋণগ্র¯ ’হয়ে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এবিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) মহিদুর রহমান বলেন, জুয়া খেলার এই বিজ্ঞাপন সরকারী ভাবে বন্ধ না হলে তা রোধ করা যাবে না। এটা বিটিআরসির নিয়ন্ত্রনে হওয়ায় পুলিশের কিছুই করার নেই। রাষ্ট্র্র উদ্যোগ নিলেই কেবল অনলাইন জুয়া বন্ধ করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সেলিব্রেটির ছবি ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় জুয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এতে শুধু গ্রামের মানুষই নয়, অনেক বুঝদার চাকরীজীবীও আসক্ত হয়ে পড়ছে।