সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা আমাদের সমাজে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবনার খোরাক জোগায়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে ৩ হাজার ৫৫৪টি খুন, ৪ হাজার ১০৫টি ধর্ষণ, ১২ হাজার ৭২৬টি নারী ও শিশু নির্যাতনসহ অন্যান্য সহিংস ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিপুল পরিমাণ তথ্য উঠে এসেছে। পাশাপাশি চোরাচালান, মাদক, ডাকাতি ও দস্যুতার মতো অপরাধেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলা হয়েছে। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে বড় ধরনের অপরাধের হার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে এ দাবির পেছনে যুক্তির ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসেই খুন হয়েছে ১ হাজার ৯৩৩টি, ধর্ষণ ২ হাজার ৭৪৪টি। যদি এ প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে বছরের শেষে সংখ্যাটি আগের বছরের তুলনায় সমান বা অধিক হবে বলেই আশঙ্কা করা যায়। অপরাধের সংখ্যা ও ধরণ যতই পরিসংখ্যান দিয়ে ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, জনসাধারণের মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভব তৈরি হয়েছে, তা অস্বীকার করা যায় না। মাদক সংক্রান্ত ৩৮ হাজারের বেশি অপরাধ কিংবা নারী ও শিশু নির্যাতনের ১২ হাজারের বেশি ঘটনা সামাজিক কাঠামোর দুর্বলতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুসারে "স্থিতিশীলতা"র যে দাবি করা হচ্ছে, তা কিছু নির্দিষ্ট অপরাধে হয়তো সত্যি হতে পারে, কিন্তু সামাজিক বাস্তবতায়, যেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ নানা সহিংসতার শিকার হচ্ছে, সেখানে শুধু সংখ্যা দিয়ে আতঙ্ককে প্রশমিত করা যায় না। অপরাধ প্রতিরোধে শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর আস্থা রাখলেই চলবে না, প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা, দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র ও নাগরিকদের পারস্পরিক আস্থাই একটি সুরক্ষিত সমাজের ভিত্তি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে পরিসংখ্যানের পেছনের বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা-যাতে করে অপরাধ প্রবণতা শুধু পরিসংখ্যানে নয়, বাস্তব জীবনেও হ্রাস পায় এবং মানুষ প্রকৃত নিরাপত্তা অনুভব করে।