দেশের অর্থনতি ভয়ংকর বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। দেশের উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারী এবং শিল্প ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের কণ্ঠে হতাশার সুর। কয়েক বছর আগেও যেসব উদ্যোক্তা বলতেন, এবার কারখানায় নতুন লাইন চালু করব, আধুনিক যন্ত্র আনব, রপ্তানির বাজার বাড়াব, তাঁরাই এখন ব্যাংকের কিস্তি মেটানো নিয়ে সন্দিহান। উচ্চ সুদের ভয়াল ছায়া, ডলার সংকটের দীর্ঘ রেশ এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে উদ্যোক্তাদের। এতে গতি হারাচ্ছে দেশের শিল্প খাত। কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের টুঁটি চেপে ধরার মতো নানামুখী সংকট ও অস্থিরতা। এর মধ্যে ছিল করোনা মহামারি, যা চলেছে কয়েক বছর ধরে। এরপর এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা। প্রভাব রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল-অবরোধ। ক্ষমতার পালাবদলের পরও সংকট না কমে উল্টো বেড়েই চলেছে। চলমান অস্থিরতায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে ধস নেমেছে। লোকসানের মুখে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে চাকরি হারাচ্ছেন কর্মীরা। নানা রকম সংকটে সামপ্রতিক সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে মূলধনী যন্ত্রের আমদানি কমেছে ১৯.৬ শতাংশ, যা শিল্প উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে বড় ঝুঁকির ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, যেসব খাতে আমদানি হ্রাস সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে চামড়াশিল্প শীর্ষে। এ ছাড়া প্যাকেজিং, বস্ত্র ও পাট খাতও রয়েছে তালিকায়। বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমেছে রেকর্ড পরিমাণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, মে মাসে এই খাতে ঋণছাড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.১৭ শতাংশ, আগের মাস এপ্রিলে যা ছিল ৭.৫০ শতাংশ। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এক বড় অশনিসংকেত। ঋণপ্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার জন্য মূলত দায়ী ঋণের উচ্চ সুদহার, যা এখন ১৬ শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। ক্রমবর্ধমান সংকটে গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ। এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ আজ এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। শিল্পায়নের স্বপ্ন ভেঙে গেলে শুধু কর্মসংস্থানই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বাংলাদেশ হারাবে আত্মমর্যাদা ও ভবিষ্যতের পথ। তাই যেকোনো মূল্যে সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। আর সে জন্য দ্রুত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।