দেশে খুন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এমনকি প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটছে। বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা এরকম পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি এবং চাঁদাবাজির লাগামহীন বিস্তার এখন এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ চাঁদাবাজির কাছে জিম্মি। মানুষ যেকোনো মূল্যে এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে সারা দেশে তিন হাজার ৮৫৭টি হত্যা মামলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩২১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মহানগর পুলিশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৮০টি এবং ঢাকা পুলিশ রেঞ্জে ৯০৩টি হত্যা মামলা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। চাঁদাবাজির বিষয়টি রীতিমতো লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সাভার, ঝিনাইদহ, মিরসরাই, ময়মনসিংহ, আশুলিয়া, এমনকি চট্টগ্রাম পর্যন্ত এই আন্দোলনের ঢেউ পৌঁছেছে। ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি, চাঁদা না পেয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, দোকান দখল, মাছ চাষে বাধা, এমনকি ঘরে ঢুকে চাঁদা চাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। ভুক্তভোগীরা এতটাই ভীত যে অনেকে প্রাণভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগও করতে পারছেন না। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ অপশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ঝুঁকে থাকার প্রবণতা এই পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই অপরাধপ্রবণতাকে আরো উসকে দিচ্ছে। যদিও সরকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগের কথা বলছে; যেমন—চিরুনি অভিযান, চেকপোস্ট বৃদ্ধি, এআই প্রযুক্তির ব্যবহার এবং চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরির কাজ, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এর প্রকৃত প্রভাব এখনো দৃশ্যমান নয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা এবং কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশনাকে কার্যকর করতে হলে পুলিশের প্রতিটি স্তরে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং পেশাদারি বজায় রাখা জরুরি।
এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং তাদের নির্ভয়ে অভিযোগ জানানোর পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য। অন্যথায় এই লাগামহীন অপরাধপ্রবণতা রাষ্ট্রের ভিত্তিকে আরো দুর্বল করে তুলবে।