ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বিজিএফের গুলিতে ২২ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন এবং ৩২ জন আহত হয়েছেন। প্রতিবারই ভারতের পক্ষ থেকে ‘ভুলবশত’ বা ‘আত্মরক্ষার জন্য’ গুলির ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও সীমান্তে হত্যাকাণ্ড থামছে না।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানাচ্ছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে মোট ৬০৭ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। প্রতিবারই দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও যৌথ সম্মেলনের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ফেলানী খাতুন, যার লাশ কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। সেদিনের ছবি বিশ্ব বিবেক নাড়িয়ে দিয়েও ভারতের মনোভাব পরিবর্তন হয়নি। ২০২৩ সালে বিজিবি সদস্য রইসুদ্দিনকেও গুলি করে হত্যা করা হয়, যা বিএসএফ ‘ভুলবশত’ ঘটানো বলেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মন্তব্য করেছেন, এটি নিঃসন্দেহে আইনবিরোধী হত্যা। নিহতরা কেউই সশস্ত্র ছিলেন না। তিনি বলেছেন, সীমান্তে একটি স্বাধীন সিভিল কমিশন গঠন করা জরুরি। সরকারি বা যৌথ কমিশন কার্যকর হবে না, তাই নাগরিক পর্যায়ের নজরদারি প্রয়োজন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত ছাড়া চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ আরও পাঁচটি দেশের সীমান্ত রয়েছে। কিন্তু অন্য দেশের সীমান্তে এমন হত্যার ঘটনা নেই। চীনের সঙ্গে নিরস্ত্র সীমান্ত পাহারার চুক্তি থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের প্রস্তাবনা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেছেন, বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে স্পষ্ট এবং দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। প্রয়োজনে বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “এখনই সেই সময়।”
বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং হত্যাকাণ্ড বন্ধে বিজিবি-বিএসএফ যৌথ সম্মেলনের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বিশ্লেষকরা আশা করছেন, এবার কেবল আলোচনার নয়, বাস্তব প্রয়োগযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ এখন আর কেবল কথার কোনো মূল্য নেই।