মতলব উত্তরে মেঘনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

এফএনএস (মিজানুর রহমান; চাঁদপুর) : | প্রকাশ: ৩০ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:৪৬ পিএম
মতলব উত্তরে মেঘনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

চাঁদপুরের  মতলব উত্তর উপজেলার ধনাগোদা সেচ প্রকল্প সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মতলব উত্তর উপজেলায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে। শনিবার (৩০ আগষ্ট-২০২৫) বিকালে উপজেলার মোহনপুর লঞ্চঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদীর পাড়ে  মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কৃষকদলের যুগ্মসম্পাদক ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ব্যারিষ্টার ওবায়েদুর রহমান টিপু।

মোহনপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগন ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে এবং মোহনপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা কৃষকদলের সহসভাপতি হানিফ পাটোয়ারী, ছেংগারচর পৌর কৃষকদলের সভাপতি জাকির হোসেন দর্জি, ষাটনল ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাষ্টার, মোহনপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুরুজ মিয়া প্রমূখ।

মতলব উত্তরের মেঘনা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করার ফলে নদী ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার কর্মসূচি পালন করে। সভায় প্রধান অতিথি ব্যারিষ্টার ওবায়েদুর রহমান টিপু বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে  বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধ এখন হুমকির মুখে। এভাবে যদি বালু উত্তোলন চলতে থাকে তাহলে বর্তমানে এই এলাকার সব বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, জনগনকে সাথে নিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বালু উত্তোলন করা বন্ধ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। এ যেন সিলেটের আরেক সাদা পাথর

চাঁদপুর মেঘনায় চলছে বালু লুট

চাঁদপুরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে বালু লুটের উৎসবে মেতেছে বালুখেকোরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ দৃশ্যমান না থাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে বালু সন্ত্রাসীরা। আওয়ামী লীগের বালুকাটা শেষ, এখন চিহ্নিত রাজনৈতিক দলের খাটিয়ে চালানো হচ্ছে চাঁদপুর মেঘনা নদীর বালু উত্তোলন ও বিক্রি।

মুন্সীগঞ্জের নৌ সীমানার নাম করে এবং চাঁদপুর মেঘনায় দিনে-রাতে মেঘনায় নামানো হচ্ছে অর্ধশতাধিক অবৈধ ড্রেজার। তোলা হচ্ছে বালু। এভাবে নিয়মিত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ধস দেখা দিয়েছে। এতে নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন)।

এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের টনক নড়বে কি সিলেটের সাদাপাথরের মতো সব ফুরানোর পরে?

জানা যায়, বালু সন্ত্রাসী কিবরিয়া মিয়াজি ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরেই মেঘনা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। তাদের এ ধরনের কাজে জড়িত থাকা দুপক্ষের বিরোধে গোলাগুলিতে একাধিক ব্যক্তি মারাও গেছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এসব ঘটনায় এখনো মামলা চলছে। এতকিছুর পরও কীভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে! এ প্রশ্ন মতলব উত্তরবাসীর।

সূত্র জানায়, মতলব উত্তরের সীমানাসংলগ্ন মুন্সীগঞ্জের কয়েকটি মৌজার বালুমহাল জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে এর আড়ালে বালু সন্ত্রাসীরা নাছিরারকান্দি, বোরচর, দশানি, বাহাদুরপুর, খুনেরচর, বাহেরচর, বেলতলী, ষাটনল, লালপুর ও কালিপুরে নদীতে ৫০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে এক সময় ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, বেড়িবাঁধ ও ইকোনমিক জোনে ভাঙন দেখা দিতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অবৈধ বালুখেকোদের প্রতিহত করা খুবই কঠিন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কোনো লাভ নেই। এরা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় অবৈধ ড্রেজার চালায়। কেউ প্রতিবাদ করলে তারও প্রাণনাশের হুমকি দেখা দেয়। যার কারণে কেউই প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। ষাটনল ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম সরকার জানান, নদীতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, মতলব উত্তরের সীমানায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত নদীতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মহসিন উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। যেসব এলাকায় বালু উত্তোলন করা হয় সেখানে নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা অচিরেই যৌথ বাহিনীর একটি অভিযান পরিচালনা করব। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কেউ পার পাবে না।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে