ছিনতাই বেড়েই চলেছে-নিরাপত্তা ফিরবে কবে?

এফএনএস | প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম
ছিনতাই বেড়েই চলেছে-নিরাপত্তা ফিরবে কবে?

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, ফার্মগেট, তেজগাঁও কিংবা গুলিস্তান-প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ‘চাকু-ব্লেড পার্টি’র তৎপরতা চলছে। ভয়ঙ্কর এসব ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিচ্ছে, সামান্য প্রতিবাদেই চলছে ছুরিকাঘাত-কখনো মৃত্যু পর্যন্ত। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবই বলছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসেই সারা দেশে ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে এক হাজার ৪৮৩টি। ২০২৪ সালে পুরো বছরেও যেখানে মামলা ছিল ১,৪১২টি। এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দেয়, অপরাধ বাড়ছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ, কারণ অধিকাংশ ভুক্তভোগী মামলা করেন না-সময়, ঝামেলা ও ভয়ের কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কর্মহীনতা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, হতাশা ও মাদকাসক্তি তরুণদের একাংশকে অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কমে যাওয়া এবং অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনা অপরাধচক্রকে আরও সাহসী করছে। রাজধানীতে এখন রাত মানেই ভয়। ফুটপাত, বাসস্ট্যান্ড, পার্কসংলগ্ন এলাকা কিংবা ওভারব্রিজ-সব জায়গাতেই লুকিয়ে থাকে ছিনতাইকারীর আতঙ্ক। অনেক এলাকায় রাস্তার বাতি নষ্ট, সিসিটিভি অচল, টহল পুলিশের সংখ্যা সীমিত। ফলে অপরাধীরা জানে, ধরা পড়ার ঝুঁকি খুব কম। অপরাধ দমন শুধু অভিযানে সীমাবদ্ধ থাকলে দীর্ঘমেয়াদি ফল আসে না। দরকার গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে নিয়মিত অভিযান, এবং কার্যকর সড়ক নিরাপত্তা পরিকল্পনা। পাশাপাশি, স্থানীয় কমিউনিটি ও ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করে রাতের নজরদারি কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। তবে প্রতিরোধের আরেক দিক হলো সামাজিক পুনর্বাসন। যারা অর্থনৈতিক চাপে বা হতাশায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের জন্য কর্মসংস্থান, কাউন্সেলিং ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি জরুরি। শুধু শাস্তি নয়, বিকল্প জীবনপথ দেখানোর ব্যবস্থাই টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। নাগরিক নিরাপত্তা কোনো বিলাসিতা নয়-এটি রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। রাজধানীসহ সারাদেশে যদি মানুষ রাতে নিশ্চিন্তে হাঁটতে না পারে, তবে উন্নয়নের সব পরিসংখ্যানই অর্থহীন হয়ে পড়ে। এখন সময়, দৃশ্যমান নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার। নাগরিকের জীবনের নিশ্চয়তা ফিরিয়ে দিতে পুলিশ, প্রশাসন ও সমাজ-সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।