গাছতলা ডাকাতিয়া নদীর তীরে হচ্ছে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ

এফএনএস (মিজানুর রহমান; চাঁদপুর) : | প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম
গাছতলা ডাকাতিয়া নদীর তীরে হচ্ছে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ

প্রতিষ্ঠার প্রায় ৮ বছর পর অবশেষে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।চাঁদপুর সদর উপজেলার গাছতলা এলাকার ডাকাতিয়া নদীর তীর সংলগ্ন স্থানেই হচ্ছে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ। বৃহস্পতিবার(২৩ অক্টোবর, ২০২৫) সকালে এ বিষয়ে অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত ভূমির নকশা সরজমিন পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. একরামুল ছিদ্দিক, 

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রকল্প পরিচালক ডা. হারুন অর রশিদ, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাপ্পি দত্ত রনিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন। জমির শ্রেণি যাচাই-বাছাই শেষে ওই এলাকার মহাদেব গাছতলা ও চরমেশা (জেএল নং ৯০ ও ৮৮) মৌজার  ৩০ একর অধিক জমি অধিগ্রহণ চুড়ান্ত করা হবে।

এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের নিজ গাছতলা গ্রামের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে পূর্ব দিকে দেওয়ানবাড়ি পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর তীর সংলগ্ন  জমিগুলোর শ্রেণি সঠিক আছে কিনা তা পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শন শেষে এসব তথ্য জানান চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) একরামুল ছিদ্দিক।

তিনি বলেন, এরপূর্বেও জমির শ্রেণি সঠিক আছে কিনা দেখা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব সার্ভেয়ারদের মাধ্যমে এখন আবার অধিকতর যাচাই করা হলো। কারণ এরসাথে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের আর্থিক বিষয় জড়িত রয়েছে। যাচাই শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এর প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এরপর তৈরি করা হবে প্রাক্কলন । দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন হবে এবং আমরা দুটি মৌজায় মেডিকেলের জন্য এখানে ৩০ একরের অধিক জমি অধিগ্রহণ করব।

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রকল্প পরিচালক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন,প্রায় আট বছর অতিবাহিত হলেও এখনো মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ অন্যান্য স্থাপনা আমরা পাইনি। এতে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে অচিরেই সকল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি চিকিৎসা ক্ষেত্রে চাঁদপুরবাসী পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজের সুযোগ সুবিধা পাবে।

তিনি আরো বলেন, এলাকাবাসী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের স্থায়ী সমাধান তারা চায়। সেই লক্ষ্যে দ্রুত অধিগ্রহণের কাজ শেষ করে আমাদেরকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়,  মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ কলেজ স্থাপনা নির্মাণ কাজে হাত দিবে। জমি অধিগ্রহণ শেষে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। এরপর বালি দিয়ে ভরাট কাজ করা হবে। তার ওপর অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ, স্টুডেন্ট হোস্টেল, ইন্টারনি হোস্টেল, ডক্টরস কোয়াটার, নার্স কোয়াটারসহ প্রায় ২৮ থেকে ৩০ টি স্থাপনা এখানে নির্মিত হবে। 

জানা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৭০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এই ব্যয়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ, ১০টি আবাসিক ভবন, ১১টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় এবং প্রশিক্ষণ প্রদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয় ২০১৮ সালে। তবে অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চতুর্থ তলায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এই কলেজে অষ্টম ব্যাচে

 ৩২৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। স্থায়ী ক্যাম্পাসের অভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক ও হোস্টেল সংকট।

প্রশাসন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছেন। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে চাঁদপুর ও আশেপাশের জেলার মানুষের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে