বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আমতলী ইসলামী কামিল মাদ্রাসার সভাপতি নিয়োগে চরম অনিয়ম, স্বচ্ছতা বিবর্জিত সিদ্ধান্ত এবং অধ্যক্ষ কর্তৃক পাঠানো মনোনীত তালিকা উপেক্ষা করে বহিরাগত ব্যক্তি নিয়োগের অভিযোগে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও অভিভাবকমহল। এরই প্রতিবাদে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে আমতলী বাজার সংলগ্ন মাদ্রাসা প্রধান সড়কে এক ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী।
ক্ষমতার অপ ব্যবহার করে বহিরাগত লোক কে সভাপতি করার অভিযোগ
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে পরিচালিত এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক নীতিমালা অনুযায়ী যে পরিচালক পদে তিনজনের নাম অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিরাগত একজন ব্যক্তিকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন, যাকে এলাকার কেউ চেনেন না, জানেনও না। বক্তারা এটিকে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বিরোধী, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন।
বক্তাদের অভিযোগ- “আমরা তাকে চিনি না!”
মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন-
“যে ব্যক্তিকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আমরা তাকে চিনি না, জানি না। বাহিরের লোক এনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ দিলে তা মাদ্রাসার মর্যাদা, শিক্ষার মান ও ভাবমূর্তি নষ্ট করবে।”
বক্তাদের মতে, আমতলী ইসলামী কামিল মাদ্রাসা একটি দীর্ঘ সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ স্থানীয় মর্যাদাবান, অভিজ্ঞ এবং মাদ্রাসার স্বার্থে নিবেদিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই বাছাই করা উচিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়িত্বহীনভাবে এলাকার বাইরের ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।
মানববন্ধনে বক্তারা
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন-
মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ পীর সাহেব আমতলী আলহাজ্ব মাওলানা আবু বকর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ,বানিয়াখালী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার মীর নজরুল ইসলাম, ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম, হাসান মুন্সিসহ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা, সমাজসেবক, অভিভাবক প্রতিনিধি এবং শিক্ষানুরাগীসহ আরও অনেকে।
বক্তারা প্রত্যাশা করেন, এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে ভবিষ্যতে মাদ্রাসার শিক্ষার মান ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে।
বিক্ষুব্ধ জনতার ৩ দফা দাবি
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা নিম্নোক্ত ৩ দফা দাবি পেশ করেন-
১. অধ্যক্ষ মনোনীত তালিকার বাইরে কাউকে সভাপতি করা যাবে না।
২. ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত বহিরাগত ব্যক্তির মনোনয়ন বাতিল করতে হবে।
৩. স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নীতিমালা অনুযায়ী পুনরায় সভাপতি নিয়োগ করতে হবে।
অচিরেই দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
মানববন্ধনে বক্তারা আরও জানান, যদি তাদের দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে আরও কঠোর আন্দোলন, এমনকি অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বক্তারা বলেন-
“আমাদের প্রতিষ্ঠান, আমাদের মর্যাদা- কোনোভাবেই বাহিরের লোকের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না।”
এদিকে বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। শিক্ষার মানোন্নয়ন, সুনাম ও স্বচ্ছতা রক্ষায় এলাকাবাসীর ন্যায্য দাবির প্রতি কর্তৃপক্ষের দ্রুত সাড়া এখন সময়ের দাবি।