হাটহাজারীতে

প্রজনন গবেষণাগার: যন্ত্রপাতি না থাকায় থমকে আছে কার্যক্রম

এফএনএস (কেশব কুমার বড়ুয়া; হাটহাজারী, চট্টগ্রাম) : | প্রকাশ: ৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৬:২০ পিএম
প্রজনন গবেষণাগার: যন্ত্রপাতি না থাকায় থমকে আছে কার্যক্রম

দেশের তৃতীয় আঞ্চলিক গবাদি পশুর  কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার অবস্থিত চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। কৃত্রিম প্রজনন ও ভ্রুণ স্থানান্তর (এ আই ই টি) প্রকল্পের আওতায়  হাটহাজারী পৌরসভার পশ্চিমে সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিজাত উন্নয়ন খামার সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৯ একর জমির উপর এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্থাপন করা হয়েছে  বিশালাকার এ প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭ সালে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হয় এই প্রকল্পের কার্যক্রম । জানা যায়,দেশীয় রেড কাউ (আর সি সি) জাতের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য ভাল মানের ষাঁড় হতে সিমেন উৎপাদন করে তৃণমূল পর্যায়ে খামারীদের দেশী গাভীকে প্রজনন করানোর উদ্দেশ্য হাটহাজারীতে স্থাপিত হয়েছে তৃতীয় আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার কাম বুল স্টেশন। যা চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্টেশন।  বিলুপ্তি প্রায় দেশীয় উন্নত  জাত ধরে রাখতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যেখানে রয়েছে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য আধুনিক কার্যালয়। রয়েছে সিমেন সংগ্রহের পর যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করার ল্যাবসহ নানান যন্ত্রপাতি। বাছাইকৃত ষাঁড় রক্ষণাবেক্ষণে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল দশটি শেড। প্রতি শেডে থাকবে দশটি করে ষাঁড়। সিমেন উৎপাদন বা সংগ্রহের যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করা হবে এসব শেডে। জাতীয় প্রজনন নীতিমালা অনুসারে দেশীয় জাতের (আর সি সি) গাভীকে একই জাতের ষাঁড়ের বীজ দিয়ে প্রজনন করানো বাধ্যবাধকতা রয়েছে এ প্রকল্পে। তাই প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিজাত উন্নয়ন খামার হতে যাছাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে বাছাইকৃত রেড কাউ (আর সি সি) ষাঁড় নিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। জানা যায়, দেশীয় জাতের আরসিসি জাতের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য স্থাপন করা প্রতিষ্ঠানে প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের পর পর অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে যাছাই-বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিজাত উন্নয়ন খামার হতে নয়টি ষাঁড় নেয়া হয়েছে। বাছাইকৃত ষাঁড়দের নিয়মিত পরিচর্যা করা হচ্ছে। খালি জায়গায় ষাঁড়ের পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহে চাষ করা হচ্ছে উন্নতমানের ঘাস, ভুট্টা। বর্তমানে  একটি শেডে  নয়টি ষাঁড় সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। তাদের দেখভাল করছেন কয়েকজন কর্মচারী। বাকি নয়টি শেড খালি পড়ে আছে। শেডের সন্নিকটে আছে খড় রাখার গুদাম। সাজানো গোছানো পৃথক পৃথক কক্ষ। ল্যাব কক্ষে বাক্সবন্দী কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। বাক্সবন্দী অন্তত দুই কোটি টাকার যন্ত্রপাতি প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে আনা হয়েছে। তবে এসব যন্ত্রপাতি কার্যক্রম পরিচালনা হবে  দ্বিতীয় পর্যায়ের। প্রথম পর্যায়ের যেসব যন্ত্রপাতি লাগবে তা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার দেড় বছর পার হলেও এখনো আসেনি। ফলে যে উদ্দেশ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ  প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় তা থমকে আছে। প্রাথমিক যন্ত্রপাতি বলতে ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহে যে সব যন্ত্রপাতি লাগবে সেগুলো কে বোঝানো হয়েছে। প্রথমে সিমেন সংগ্রহ করতে হবে তারপর সিমেন্সের গুনগত মান পরীক্ষা, ধারণ ক্ষমতা, পরিমাণ, পেকেটজাত প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি। সিমেন সংগ্রহের যন্ত্রপাতি না থাকায় অন্যান্য কিছু থাকলেও কার্যক্রম থমকে আছে। তাই প্রকল্প পুরোদমে চালু করতে প্রাথমিক যন্ত্রপাতির বিকল্প নাই। সেসব যন্ত্রপাতি  প্রেরণে ইতিমধ্যে গত বছরের ১৩ নভেম্বর লিখিতভাবে উর্ধ্বতনকে জানিয়েছেন বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডাঃ নাবিল ফারাবি। তবে কবে নাগাদ আসতে পারে তা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি তিনি। ১ জন উপ পরিচালক, ১ জন সায়েন্টিফিক অফিসার, ১ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান ও ১ জন অফিস সহকারীর পদ থাকলেও সবগুলি পদ শূন্য। ইতিমধ্যে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১১ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৫ জনকে কর্মস্থলে পাওয়া গেলেও বাকি ৬ জন রয়েছেন ডেপুটিশনে । নিয়োগের পর কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও খুব দ্রুত উচ্চমহলে সুপারিশের মধ্য দিয়ে যে যার পছন্দমত কর্মস্থলে চলে যান।  কারণ হিসেবে জানা যায়, যে বেতন ভাতায় তাদের নিয়োগ দেয়া হয় ১ জন ছাড়া তারা কেউ হাটহাজারী উপজেলা কিংবা চট্টগ্রাম জেলার কেউ নন। দুর জেলা থেকে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে সেই বেতনে তাদের নিজের ব্যয় মিটিয়ে যাতায়াত খরচ এবং পরিবার চালানো কস্টকর। যদি হাটহাজারী বা পার্শ্ববর্তী উপজেলা এলাকা থেকে নিয়োগ দেয়া হত তাহলে একদিকে যেমন বেকার সমস্যার সমাধান হত অপরদিকে কর্মস্থলে প্রতিদিন উপস্থিত থাকতেন। দুর-দুরান্তের অজুহাত দেখিয়ে ডেপুটেশনে যেতে হতো না। নিয়োগ পাওয়া ১১ জন কর্মচারীর মধ্যে ১ জন  পার্বত্য চট্টগ্রামের কাউখালী উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হলে, ২৫/৩০ জনের জনবলের প্রয়োজন হবে। অফিস সহকারী, গাড়ি চালক, দাড়োয়ানসহ বিভিন্ন পদের লোক নিয়োগ দেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে স্থানীয়দের মূল্যায়ন না করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা বলেন, অন্যান্য উপজেলা কিংবা জেলায় কোন প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগ দিতে স্থানীয়দের  প্রাধান্য দেওয়া হয়।  কিন্তু হাটহাজারীতে এর ব্যতিক্রম। উপজেলায় শত শত শিক্ষিত বেকার রয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতানুযায়ী নিয়োগ দিলে বেকারের সংখ্যা কমে যাবে। স্থানীয়দের  নিয়োগ দেওয়া হলে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেকাংশে সহজ হবে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করা হয়। কৃত্রিম প্রজনন প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ শাহজামান খাঁন তুহিন গনমাধ্যমকে  জানান, প্রাথমিক যন্ত্রপাতির বিষয়ে প্রকল্পের সাথে যারা জড়িত উনারাই বলতে পারবেন। সামনে নতুন করে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। পূর্বে স্থানীয়দের কেন বাদ দিল বা কিভাবে কি করা হয়েছে  সেটা জানা নেই বলে উল্লেখ করে এবার অবশ্যই স্থানীয়দের প্রাধান্য দেয়া হবে বলে তিনি জানান কয়েক । 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে