দিন দিন অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থার জনপ্রিয়তার কারণে মানুষ সামনা সামনি আলোচনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে মানুষ অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক ও অন্তর্মুখী হয়ে যাচ্ছে এবং হ্যাকিং, পর্ণোগ্রাফি, অনলাইন গ্যাম্বলিং ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকান্ডে আসক্ত হচ্ছে। এভাবে আইসিটি মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মক্ষেত্রে আইসিটি যেমন কারও জন্য আশীর্বাদ, তেমনি কারও জন্য অভিশাপ। কারণ কম্পিউটার ও বিভিন্ন আইসিটি পণ্য কর্মক্ষেত্রে মানুষের স্থান দখল করে নিচ্ছে বলে অনেক মানুষ তাদের চাকরি হারাচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি বিষয় হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এসব যোগাযোগমাধ্যমের সব প্রক্রিয়াই সব স্তরের মানুষের মধ্যে এমনভাবে চেপে বসেছে যেন এক দিনও একে বাইরে রেখে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হচ্ছে এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এর ব্যবহারের ধরন যা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত। প্রত্যেকটি জিনিসের ভালো-মন্দ দুটো দিক থাকতে পারে। মূলত এর ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে এর ভালো-মন্দের দিক। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির অংশ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত সামাজিক মাধ্যমের মধ্যে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ভাইবার, লিংকেডিন অন্যতম। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় পুরোটা জুড়েই আছে সামাজিক মাধ্যমের আনাগোনা। সকালে ঘুম জড়ানো চোখেই আমরা মোবাইলটা খুঁজে একটু ফেসবুকে চোখ বুলিয়ে নিই। যেকোন মাধ্যমে বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ বার্তাগুলোয় নজর দিই। আমাদের অনেকেরই দিনের শুরুটা এভাবে স্মার্টফোনের পর্দায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুঁ মেরেই শুরু হয়। সামাজিক মাধ্যমগুলোর বৈচিত্র্যময়তার জন্যই তা এত জনপ্রিয়। তবে এক্ষেত্রে ইতিবাচকভাবে এর ব্যবহার নিশ্চিত করাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভরতা এক গভীর সামাজিক সংকটে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। গবেষণা বলছে, ৮ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশই বিভিন্ন মাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত। এতে পড়াশোনা, মানসিক গঠন, সামাজিক আচরণ এবং শারীরিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জরুরি হচ্ছে শিশুদের ডিজিটাল সুরক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ। পরিবার, স্কুল ও রাষ্ট্র—সবার মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠা প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ, পরিবারে বিকল্প বিনোদনের সুযোগ তৈরি, অভিভাবকের আচরণে সঠিক উদাহরণ স্থাপন এবং শিশুদের সঙ্গে নিয়মিত খোলামেলা আলাপ এসবই পরিস্থিতি বদলাতে পারে। প্রযুক্তি নিষিদ্ধ নয়, তবে ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হওয়া চাই।