কালীগঞ্জে লোকসানের মুখে ফুলকপি চাষিরা

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : | প্রকাশ: ১০ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
কালীগঞ্জে লোকসানের মুখে ফুলকপি চাষিরা

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে লোকসানের মুখে পড়েছেন এবার ফুলকপি চাষীরা। প্রতি পিস কপির উৎপাদন খরচ যেখানে ১০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, সেখানে তাদের এখন তা বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২ টাকা থেকে ৩ টাকায়। ফুলকপি চাষিরা বলছেন গত বছর গুলোতে ফুলকপি চাষে লাভবান হওয়ায় এ বছর তারা ব্যাপক আবাদ করেছেন। শীতের শুরুতে আগাম ফুলকপি বিক্রি করে বেশ ভালো লাভও করেছিলেন। প্রতি পিস আগাম ফুলকপি বিক্রি হয়েছিল ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে কপি উৎপাদনের ভরা মৌসুম, যেখানে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে গেছে। ফলে কপির দাম কমে গেছে। পাইকাররা অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে আগের মতো দাম দিয়ে কপি কিনছেন না। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। তন্মধ্যে ১৫ হাজার টাকার চারা, ৬ হাজার টাকা হালচাষ, ৭০০ টাকা দিনমজুর, সার ও কীটনাশকের জন্য প্রায় ৮ হাজার টাকা, বর্গা নেওয়া জমির মালিককে বছরে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। মোট খরচের তুলনায়, ফুলকপি বিক্রি করতে গিয়ে ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। ডাকবাংলা বাজারে ফুলকপি বিক্রি করতে আসেন কৃষক হারুনুর রশিদ। সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দাড়িয়ে থেকেও পাইকারি ব্যাপারীদের কাছে তা বিক্রি করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে ভ্যান ভাড়া উঠাতে নিজেই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ২ টাকা,৩ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪ টাকা দামে বিক্রি করেন সেই ফুলকপি। হারুনুর রশিদ চুয়াডাঙ্গা উপজেলার নবীননগর গ্রাম থেকে ডাকবাংলা বাজারে ফুলকপি বিক্রি করতে আসেন। তার মতো অনেক কৃষক আশপাশের এলাকা থেকে ডাকবাংলা বাজারে সবজি বিক্রি করতে এসেছেন। কেউই সবজি বিক্রি করে হাসিমুখে ফিরতে পারেনি।দাম না পাওয়ায় উৎপাদন খরচ দূরে থাক সবজি তোলার খরচও উঠছে না যে কারনে অনেক কৃষক ফুলকফির ক্ষেত নষ্ট করে ধান রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।এলাকার কৃষকরা দাম না পাওয়ায় উৎপাদন খরচ দূরে থাক সবজি তোলার খরচও উঠছে না। খরচ না ওঠার কারণে খেত থেকে সবজি তুলছেন না কৃষক। খেতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। অনেকে জমিতে অন্য ফসল আবাদের জন্য পাওয়ার টিলার চালিয়ে নষ্ট করছেন এসব সবজি। ফলে সবজি চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষক। স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবি, মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম পাচ্ছেন না কৃষক।প্রতি বছর ফুলকফি ও বাধা কফির চাষে লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষক সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। অনেকে দাম না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে খেত থেকে সবজি তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন।খেত থেকে এসব ফুলকপি ও বাঁধাকপি কেউ কেউ গরুকে খাওয়ানোর জন্য কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে কেটে ফেলে দিচ্ছেন আবার কেউ পাওয়ার টিলার চালিয়ে নষ্ট করছেন। পৌষের শেষ দিকে শীতের দাপট বেড়েছে। তবুও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠে শীতকালীন সবজির উৎপাদন বেড়েছে। জেলায় মাঠের পরে মাঠজুড়ে শীতকালীন সবজির চাষ। বাজারেও তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। শাক-সবজির দাম কমেছে রেকর্ড পরিমাণ। সবজির দাম বর্তমানে কম হলেও আগাম সবজি চাষিরা অনেক খুশি। সরেজমিনে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন মাঠে শীতকালীন সবজির ভরপুর আবাদ লক্ষ্য করা করা যাচ্ছে। যেমন সদর উপজেলারসাধুহাটি, মধুহাটি,সাগান্না, হলিধানী মহেশপুর,কোটচাঁদপুর,কালীগঞ্জ উপজেলাতে শীতকালীন সবজির ব্যাপক আবাদ হয়েছে। বাঁধাকপি, ফুলকপি উৎপাদন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকরা। কিন্তু কৃষকরা দাম না পাওয়ার কারনে হতাশ হয়ে পড়েছে। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ১২ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হযহয়েছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলাতে ২ হাজার ৩৬০ হেক্টর, কালীগঞ্জে উপজেলায় ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর , মহেশপুর উপজেলায় ২ হাজার ৮৫ হেক্টর , কোটচাঁদপুর উপজেলায় ১ হাজার ২৪৯ হেক্টর, শৈলকুপাতে ৩ হাজার ৭৬৬ হেক্টর এবং হরিণাকুন্ডুতে ১ হাজার ৩৭ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ বৃষ্টির কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। যদি সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতো, তবে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন বলে জানান তারা।এছাড়া অনেক পাইকারি ব্যবসায়িরা খেতের কপি আগাম কিনে রেখেছিলেন। তারা এখন ক্ষতির মুখে। মনিরুল ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ি সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে আগাম ফুলকপি কিনে ঢাকার বিভিন্ন আড়তে সরবরাহ করেন।কিছুদিন আগে তিনি কৃষকদের কাছ থেকে ৭৮ হাজার ২০০ পিস কপি কিনেছিলেন, কিন্তু এখন তা ২ থেকে ৩ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে তিনি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষকরা বলছেন গত বছর ফুলকপি চাষে লাভবান হওয়ায় এ বছর বেশি জমিতে ফুলকপি চাষ করেছে। কালীগঞ্জ শহরে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ভ্যানে করে অনেকেই ফুল কফি বিক্রি করছে জ্জ টাকা প্রতি পিচ। কৃষকরা বলছেন, গত বছর ভালো দাম ছিল যার কারণে সবজির বিক্রি করে লাভ হয়েছিল, কিন্তু এবার সবজি চাষ করে আমাদের মাথায় হাত। বাজারে সবজির কোনো দাম নেই যেখানে গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন খরচ বেশি। বাজারে কেউ ফুলকফি নিতেই চাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে পাওয়ার টিলার চালিয়ে জমিতে থাকা ফুল কপি ও বাঁধাকপি নষ্ট করে দিচ্ছে। কৃষকরা শ্রমিক দিয়ে ক্ষেত থেকে ফুলকফি তুলতে খরচ পড়ছে ২ টাকা করে সেখানে বাজারে এসব ফুলকফি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিচ ২ টাকা করে। যে টাকা দিয়ে খেত থেকে সবজি তুলছে সে টাকাই উঠছে না। ফলে উৎপাদিত সবজি খেতে থেকেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ গরু দিয়ে খাওয়ানোর জন্য ক্ষেত থেকে এসব সবজি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ কেটে জমি পরিষ্কার করছেন।কালীগঞ্জ নতুন বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা নাজিম উদ্দিন বলেন, সবজির দাম কমে গেছে এ জন্য ক্রেতারা খুশি। তবে কৃষকরা এখন খুব একটা দাম পাচ্ছে না। গত ২ সপ্তাহ ধরে সবজির বাজার স্বাভাবিক। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নূর-এ-নবী বলেন, এবার শাক সবজির ফলন ভালো হয়েছে। তবে বর্তমানে মাঠে শীতকালীন সবজির উৎপাদন বেশি, এ কারণে সবজির বাজার অনেকটাই কম। তবে কৃষকরা আগাম সবজিতে অনেক ভালো দাম পেয়েছেন। শীতকালীন সবজি বাজার যদি ভালো হতো তাহলে কৃষকেরা সবজি চাষে আরও বেশি আগ্রহী হতেন।