প্রযুক্তির ব্যবহারেরও সীমাবদ্ধতা থাকতে হবে

এফএনএস | প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম
প্রযুক্তির ব্যবহারেরও সীমাবদ্ধতা থাকতে হবে

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে অবিরত। প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুততম সময়ে দেশে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবন-জীবিকারও উন্নয়ন ঘটছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বিশ্বের কোথায়, কখন, কী ঘটছেÑতা মুহূর্তের মধ্যে জানতে পারছি। নিত্যনতুন ধ্যানধারণা, উন্নয়নের গতিধারা সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি। উন্নয়নের এ গতিধারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। এক কথায় বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। চিঠিপত্র আদান-প্রদান, টাকাপয়সা লেনদেন বা যে কোনো পণ্যসামগ্রী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা-নেওয়া এখন সময়ের ব্যবধান মাত্র। প্রযুক্তি বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে মানুষের জীবনকে নিরাপদ, উন্নত ও আরামদায়ক করেছে। প্রযুক্তি আবার নানারকম সমস্যাও সৃষ্টি করছে। ইন্টারনেট আধুনিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে ইন্টারনেটের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাতেও কোন সন্দেহ নেই। বিভিন্ন উদ্দেশ্যেই বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ দিনরাত ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। কিন্ত আমরা হয়তোবা বুঝতেই পারি না যে, ইন্টারনেট ব্যবহার করা কেবল আমাদের অভ্যাস নয়, একটি আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই আসক্তির কারণেই আমরা সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে মানসিক ব্যাধির অত্যধিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করি। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক নির্ভরতা, যা জীবনের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। শুধু ইন্টারনেট আসক্তি নয়, ইন্টারনেট গেমিং ডিসঅর্ডার (আইজিডি) আমাদের মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অত্যধিক ইন্টারনেট ব্যবহার অনেক মানসিক এবং মনোসামাজিক ব্যাধির সাথে সম্পর্কিত। এতে আমাদের শিক্ষার্থী সমাজ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মানসিকভাবে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের ৮৬ শতাংশই শুধু অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে এবং ৭২.২ শতাংশ জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। প্রযুক্তি আমাদের নূতন প্রজন্মকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে। সুতরাং আমাদের বুঝতে হবে যে, প্রযুক্তির প্রয়োগ কীভাবে এবং কোথায় সীমিত করা উচিত। যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এটা যেমন দূরকে কাছে টানে, তেমনি এটা একপ্রকার ফাঁদ হতে পারে। অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারী তাদের বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সহায়তা ব্যতিরেকে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে উৎসাহী হয়। একইভাবে, ভিডিও গেমগুলির ক্ষেত্রেও দেখা যায়, অনেক সময় সহিংস বা অনৈতিক বিষয়াবলী শিশু ও কিশোরদের নিকট স্বাভাবিক ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। মানবসভ্যতার অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তি প্রয়োজন, তবে তা যেন কিশোর বা নাবালকদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে না উঠে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করিবার দায়িত্ব অভিভাবক ও সরকার উভয়ের।