ঝিনাইদহের শৈলকুপা দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকার মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা। আর এই পেঁয়াজ আবাদকে টার্গেট করে মাঠে নেমেছে এক শ্রেণির অসাধু কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে গড়ে তুলেছে নিম্মমানের ফুওয়াং দস্তা, বিভিন্ন ধরনের বালাই নাশক ও পেঁয়াজের ভিটামিন সহ সার কীটনাশকের রি-প্যাকিং কারখানা। আর এ সব কারখানার অস্তিত্ব রয়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা ও মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী লাঙ্গলবাধ এলাকায়। অধীক লাভের আশায় এসব মানহীন কীটনাশক চাষির হাতে পৌছে দিচ্ছে শহর ও গ্রাম এলাকায় যত্রতত্র গড়ে ওঠা সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীরা। ফলে প্রতারনার শিকার হচ্ছেন চাষি। গোপনে গড়ে ওঠা সার ও কীটনাশক রি-প্যাকিং কারখানার মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের খামারবাড়ীর লাইসেন্স রয়েছে বলে জানান। তবে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, দেখতে হবে তাদের রি-প্যাকিং এর কোন বৈধত আছে কিনা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় শৈলকুপায় এবার ১৩ হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত মৌসুম থেকে ৫ হাজার হেক্টরের বেশী।
আউশিয়া গ্রামের চাষী মিল্টন বিশ্বাস বলেন, পেঁয়াজের ফলন বাড়াতে চাষিরা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। পেঁয়াজ মৌসুমে ব্যবসায়ীরা চাষিদের মৌসুমি বাকীর সুযোগে বিভিন্ন ধরনের নিম্মমানের কীটনাশক সরবরাহ করে চাষিদের নিকট। যা মাঠে প্রয়োগ করে কোন কাজ হয়না। তিনিও এ প্রতারনার শিকার হয়েছেন বলে জানান।
একই গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি গত বছর পেঁয়াজ ক্ষেতে আগাছা দমনের জন্য কীটনাশক স্প্রে করেছিলেন। সেবার আগাছা সহ পেঁয়াজ ধ্বংস হয়। এবার সেই ক্ষেতে মুরিকাটা পেঁয়াজ লাগিয়ে সেই কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় এবারো তা নষ্ট হওয়ার পর উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলে ফসল আবাদ করতে হচ্ছে। এছাড়া ফুওয়াং নামের দস্তা ব্যবহার করে কোন ফলই পাননি বলে জানান।
বাজারে নিম্মমানের সার ও কীটনাশক নিয়ে বিসিআইসি ডিলার আলম ট্রেডার্সের মালিক নোমান পারভেজ বলে, শৈলকুপায় ব্যাপকভাবে পেঁয়াজ আবাদ হয়ে থাকে। এ পেঁয়াজ আবাদ টার্গেট করে মাঠে নামে অসাধু কীটনাশক ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছেও চাষিরা অভিযোগ করেন পেঁয়াজ মাঠের প্রয়োগকৃত কীটনাশক নিয়ে।
শৈলকুপা ও শ্রীপুর সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠা সাইনবোর্ডহীন সার ও কীটনাশক রি-প্যাকিং কারখানা জেপিআর এগ্রো কেয়ার ও মজিদ এগ্রো সাইন্স এর মালিক মুজাহিদুল ইসলাম ওরফে কাজী তুহিন বলেন, ওয়াং জিংক, ম্যাগনেসিয়াম সালফার, জিপসাম, পিওর মাম নামের ব্রোন সহ বিভিন্ন কীটনাশক তিনি রি-প্যাকিং করে বাজারে সরবরাহ করে থাকেন। এসব সার ও কীটনাশক উৎপাদনে তার খামরবাড়ির লাইসেন্স রয়েছে। তবে কোন ক্যামিষ্ট ছাড়া রি-প্যাকিং এর কোন বৈধত আছে কিনা এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।
মানহীন সার ও কীটনাশক নিয়ে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, তিনিও এ ধরনের কীটনাশক ও সারের অভিযোগ পেয়েছেন। একজন উদ্যোক্তা হিসাবে খামার বাড়ি থেকে লাইসেন্স পেতেই পারে। কিন্ত সেই লাইসেন্সে সে কি ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তা দেখতে হবে। সার ও কীটনাশকের রি-প্যাকিং এর বৈধতা আছে কিনা এটাও দেখতে হবে। এসব খতিয়ে দেখে গোপনে গড়ে ওঠা সার কীটনাশকের কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।