বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে

এফএনএস : | প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম
বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে

বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও সচেতনতার অভাবে বাল্যবিবাহের ঘটনা একেবারে কম নয়। অপরিণত বয়সে বিয়ের কারণে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোগেন নারীরা। বিশেষ করে অল্প বয়সে বিয়ে ও গর্ভধারণের কারণে নারীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। বাংলাদেশে এর হার ক্রমবর্ধমান। বাল্যবিবাহ আইন প্রণয়ন এবং সচেতনতামূলক প্রচারণার নাগালের বাইরে গিয়ে একটি গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যাটির পটভূমিতে রয়েছে একটি প্রকট প্যারাডক্স- পিতামাতার প্রাথমিক ও বিবর্তনীয় প্রবৃত্তি হলো মেয়ে বা ছেলে সন্তানদের রক্ষা করা এবং তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাল্যবিবাহের মতো একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া। বাল্যবিবাহ অর্থ হচ্ছে এমন বিবাহ যার কোনো এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক। অর্থাৎ ২১ বৎসর পূর্ণ করেননি এমন কোনো পুরুষ এবং (কিংবা) ১৮ বৎসর পূর্ণ করেননি এমন কোনো নারী যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন তা বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য হয়। বাল্যবিবাহ নিরোধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে ঈযরষফ গধৎৎরধমব জবংঃৎধরহঃ অপঃ, ১৯২৯ বাতিল পূর্বক সময়োপযোগী করে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ নামে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করেন। এই আইনের ৭ ধারায় বাল্যবিবাহ করার শাস্তির বিধান উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করলে তিনি অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। আরও বলা আছে যে, যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করেন তবে তিনি অনধিক ১ মাসের আটকাদেশ বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। বাল্যবিবাহ সংশ্লিষ্ট পিতা-মাতাসহ অন্যান্য ব্যক্তিকেও এই আইনের আওতায় আনা যাবে। আইনে ন্যূনতম বিয়ের বয়স মেয়েদের জন্য ১৮ এবং ছেলেদের জন্য ২১ বছরই অপরিবর্তিত থাকলেও ২০১৭ সালে অপ্রাপ্তবয়স্ক বিয়ের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান নিয়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন সংশোধন করা হয়েছে। তবে জনসচেতনতার অভাব এবং মেয়েদের জন্য যথার্থ বিকল্প শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বা উপার্জনের সুযোগ না থাকার কারণে এ আইন এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত প্রভাব ফেলতে পারেনি। বাল্যবিবাহ রোধ করে এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে হবে যেখানে প্রতিটি মেয়ে তার পূর্ণ সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার ও স্বাধীনতা করে সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে এবং নিজেদের জীবনকে উপভোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে। তাই সকলকে এ বিষয়ে আরও অধিক সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে