ভার্মি কম্পোষ্ট সারের বাজার ব্যাবস্থাপনা করছে নালিতাবাড়ী কৃষি বিভাগ

এফএনএস (মোস্তাফিজার রহমান মিলন; হিলি, দিনাজপুর) : : | প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:০৪ পিএম
ভার্মি কম্পোষ্ট সারের বাজার ব্যাবস্থাপনা করছে নালিতাবাড়ী কৃষি বিভাগ

ইনসান আলী  ১৩ মন, আক্কাস আলী ১৪ মন, আজিজুল হক ১২ মন, নেওয়াজ আলী ৫ মন, শফিকুল ইসলাম ১৩ মন, আমিনুল ইসলাম একাই ৪০ মন এভাবে এই মাসেই নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মোট ৪০ জন কৃষক  ২৫০ মন ভার্মি কম্পোষ্ট দিয়ে গেছে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসে। অফিস প্রতি কেজি সার ১০/- টাকা মূল্যে ৪০০/- টাকা মন হিসেবে ক্রয় করছে। সার গুলি সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল ওয়াদুদ  জানালেন এই ভার্মি কম্পোষ্ট বা কেঁচো সার গুলি প্রশিক্ষিত কৃষকরা উৎপাদন করছে এবং  অফিস তা কিনে নিয়ে অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করছে। আগে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আমাদের জৈব্য সার কিনতে হতো কিন্তু এটি এখন স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকেই পাচ্ছি। এতে করে কৃষি অফিসের মাধ্যমে একটা আন্তবাজার প্রক্রিয়া তৈরী হচ্ছে। উদ্যোক্তারা টাকা পাচ্ছে অন্যদিকে অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরী হচ্ছে। সেই সাথে রাসায়নিক সারের ব্যাবহারও কমছে।

ভার্মি কম্পোষ্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। ১ মাসের বাসি গোবর খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে যে রাসায়নিক পদার্থ বের হয় তার মিশ্রনে উৎপন্ন সারকে কেঁচো কম্পোষ্ট বা ভার্মি কম্পোষ্ট বলে। এটি সার তৈরির খুব সহজ একটি পদ্ধতি। নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষিঅ ফিসের তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থ  বছরে উপজেলায় ভার্মি কম্পোষ্ট সারের শেড ছিলো ৩৫০ টি, উৎপাদন ছিলো ৩৪০ মে: টন যার বাজার মূল্য ০.৩৪ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এটি এসে বেড়েছে শেড ৫০০ টি উৎপাদন ৫০০ মে: টন  যার বাজার মূল্য ০.৭৫ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বেড়েছে জৈব সারের উৎপাদন এবং ব্যাবহার।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৫০ জন প্রশিক্ষিত কৃষক রয়েছে। প্রশিক্ষিত এই কৃষকরা প্রতি মাসে প্রায় ২৫ টন কেঁচো সার উৎপাদন করছে। উৎপাদিত এই সার এর প্রায় অর্ধেক এর বেশি ক্রয় করছে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস। ক্রয়কৃত এই সার কৃষি অফিস বিভিন্ন কৃষকের মাঝে বিতরণ করছে। কৃষকদের মধ্যে কেউ কেউ আবার কেঁচো বিক্রি করেও টাকা আয় করছে। উপজেলা কৃষি অফিস এটিকে মাঠ পর্যায়ে বাজার ব্যাবস্থাপনা করে কিভাবে কৃষকদের কাছে গ্রহণ যোগ্য করা যায় সেজন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করছে । তারমধ্যে কৃষকদের উৎপাদিত সার অফিসের মাধ্যমে  ক্রয় করা । ক্রয়কৃত সার অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা। কৃষি অফিসের প্রত্যেকটা প্রশিক্ষণে ভার্মি কম্পোষ্টের বিষয়ে আলোচনা করা। কৃষি বিভাগের সব্জি এবং বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনি বাগান গুলিতে জৈব্য সার প্রয়োগ করে কৃষকদের সরাসরি উৎসাহিত করা।

দাওধারা গ্রামের উদ্যোক্তা মো: আমিনুল ইসলাম (৪৬) এর বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায় তিনি ২০২৩ সালে ৪ টি রিং দিয়ে শুরু করে এখন তা বেড়ে ৬ টি ভেট হয়েছে। আমিনুল জানান, উৎপাদিত এই সার কৃষি অফিস ছাড়াও আশে পাশের মৎস খামারি এবং কৃষকদের কাছে তিনি বিক্রি করেন। এতে তার মাসে প্রায় ৮-৯ হাজার টাকা আয় হয় যা সংসারে এবং ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ চালাতে সহায়তা হচ্ছে।

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কেঁচো কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়ানো গেলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে আসবে এবং কৃষকরা লাভবান হবে। যেহেতু এটি কৃষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট  প্রকল্প তাই জৈব সারের আন্ত বাজার ব্যাবস্থাপনা কৃষকদের মধ্যে আরো ব্যাপকভাবে করতে পারলে এটি একটি উদাহরণ হতে পারে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে