লাগামহীন চাঁদাবাজি রোধ করতে হবে

এফএনএস : | প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম
লাগামহীন চাঁদাবাজি রোধ করতে হবে

চাঁদাবাজি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে এক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। স্বাধীনতার পর থেকেই এ সমস্যা বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং স্থানীয় গুন্ডারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করে আসছে। এই চাঁদাবাজির ফলে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা ক্রমাগত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গণঅভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, নতুন সরকার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। একটি স্বচ্ছ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গড়ে ওঠার দিকে ধাবিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। চাঁদাবাজির চক্র এখনো সক্রিয়। নানা অজুহাতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় হচ্ছে। এটি শুধু ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক ক্ষতি করে না, বরং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত করে। চাঁদাবাজির মূল কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো দুর্বল আইন প্রয়োগ এবং বিচার বিভাগের অকার্যকরতা। দেশে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইন থাকলেও তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায় বিশাল ফাঁকফোকর। অনেক সময় চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ধরা হলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে অপরাধীদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে কিছু অসাধু কর্মকর্তা চাঁদাবাজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করে, যা এ সমস্যা আরও জটিল করে তোলে এমন অভিযোগ কম নেই। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন মিরপুর-১, দারুস সালাম, শাহআলী ও চিড়িয়াখানা রোডের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছোট বড় সকল ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে রাস্তার পাশের ফুটপাতে বসা হকারদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই। ব্যবসায়ীদের দাবি, চাঁদার জন্য একটি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানার কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকার বিনিময়ে হাত করে তারা নির্বিঘ্নে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালায়। সম্প্রতি কিছু উঠতি মাস্তানের দৌরাত্ম্য এত বেড়েছে যে ব্যবসা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এসব মাস্তান ৩০ থেকে ৪০ জন। তারা কিশোরদের দলে ভিড়িয়ে চাঁদা তোলে। এসব চাঁদাবাজের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজধানীর ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের লাগামহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। তবে পুলিশের কাছে শুধু কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের আলাদা কোনো তথ্য নেই। সদস্য বাড়া ও তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বলছে কিশোর গ্যাং আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও জবাবদিহিমূলক ও সৎ হতে হবে। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কড়া আইন প্রণয়ন এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণেরও ভূমিকা রয়েছে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সাহসী হয়ে দাঁড়াতে হবে। গণমাধ্যমকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে চাঁদাবাজির ঘটনা জনসমক্ষে আসে এবং অপরাধীদের মুখোশ খুলে যায়। সব মিলিয়ে চাঁদাবাজি একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা, যা এক দিনে সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু সঠিক পদক্ষেপ এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এটি প্রতিরোধ সম্ভব।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে