জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংলাপে রাষ্ট্রপদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সুপরিকল্পিত, ধীরস্থ ও সুবিবেচিত আলোচনা চায় বিএনপি। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির তৃতীয় দফা বৈঠকে এমন বার্তা দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রতিনিধি দলের প্রধান সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, “এটি রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিষয়। এখানে দ্রুততার কোনো সুযোগ নেই। তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়।” তার মতে, জাতীয় ঐকমত্য একটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয় এবং এতে সময় নিয়ে সুস্পষ্ট আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
বিএনপি জানায়, তারা সংবিধানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পক্ষে, যার মধ্যে রয়েছে:
• একই ব্যক্তি যেন টানা দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন, তবে বিরতির পর আবারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখা যেতে পারে।
• প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা।
• রাষ্ট্রপতির কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাধীন ক্ষমতা থাকা।
• প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ পাঁচ বছরই রাখার পক্ষে দলটি। চার বছর করার প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিএনপি একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা চায়। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী:
• সংসদের নিম্নকক্ষে ৪০০ আসনের মধ্যে ১০০টি নারী আসন থাকবে, যেখানে সরাসরি ভোটে প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন।
• সংসদের ডেপুটি স্পিকারের দুইটি পদ থাকবে বিরোধী দলের জন্য সংরক্ষিত।
• সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্বেও বিরোধীদলের অগ্রাধিকার থাকবে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বিএনপি সুপ্রিম কোর্টে সচিবালয় গঠনসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ সংস্কারে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনায় তারা জানিয়েছে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে শুধু শীর্ষস্থানীয় একজন বিচারপতি নয়, কমপক্ষে তিনজন আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিকে বিবেচনায় নিতে হবে।
বিএনপি বলেছে—
• স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
• সংসদ সদস্যরা কোনো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পদে থাকতে পারবেন না।
ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিলের পরিবর্তে কমিশনের প্রস্তাব—সব ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা—তাতে একমত হয়েছে বিএনপি। এছাড়া, তারা ন্যায়সংগত ইন্টারনেট সুবিধা ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করাসহ অধিকাংশ সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। অন্যরা হলেন—ইসমাঈল জবিউল্লাহ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব আবু মো. মনিরুজ্জামান। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মনির হায়দার।
এই তৃতীয় দফা বৈঠকটি ছিল টানা আলোচনার অংশ, যা শুরু হয় গত ১৭ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় দফা অনুষ্ঠিত হয় ২০ এপ্রিল।