কালীগঞ্জে সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতিগুলো ঠিকঠাক জলে না

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : : | প্রকাশ: ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:১৭ এএম : | আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
কালীগঞ্জে সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতিগুলো ঠিকঠাক জলে না

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ৯টি ওয়াডে "গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় সৌর বিদ্যুতায়িত সড়ক বাতি স্থাপন"- প্রকল্পের অধীনে ১১২ টি সৌর বিদ্যুৎ এর সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়। এসব সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতিগুলো এক বছর পেরতে না পেরতেই হারাতে বসেছে তার কার্যকারিতা। সন্ধ্যার দিকে বাতি গুলো  জ্বললেও রাত বেশি হওয়ার সাথে সাথে কমে আলো এবং রাতের আধার কাটার বেশ পূর্বেই নিভে যায় সেই আলো।ফলে ওইসব স্থানে অন্ধকারাচ্ছন্ন এক  ভুতড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। কালীগঞ্জ পৌরসভাকে অন্ধকার মুক্ত রাখতে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ১১২ টি সৌর বিদ্যুতের খুঁটি তৎকালীন পৌর কাউন্সিলরদের দেখানো নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করা হলেও এর সুফল সেভাবে পাচ্ছে না পৌরবাসী। গত বছরের জানুয়ারি মাসে( ২০২৩ সাল) হতে ডিসেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে সৌর বিদ্যুতের খুটিসহ সড়ক বাতি স্থাপন করার কথা থাকলেও  এদিকে চলতি বছরের(২০২৪) ফেব্রুয়ারি মাসে অর্ধেক আর বাকিটা আগস্ট মাসে সম্পন্ন করে মেসার্স কুন্ডু ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পৌরসভা এলাকায় প্রতিটি সৌর বিদ্যুতের খুঁটি নির্মাণে ব্যায় করা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। কিন্তু সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি গুলোতে ব্যবহারিত সরঞ্জামাদি অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় অল্প দিনেই তা নষ্ট হতে চলেছে বলে পৌরবাসীর অভিযোগ। সড়কে  সৌর বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে অর্থলোপাট করা হয়েছে বলেও মনে করেন পৌরবাসী।  কালীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার ১১২ টি সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি স্থাপনের পূর্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষাণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের অধীনে কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় প্রায় ১৩০ টি সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছিল। যার বেশির ভাগ বাতিই ইতিমধ্যে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়েপড়ে আছে। ওই সব বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের  উদ্যোগও কখনো নেওয়া হয়নি। ফলে পৌরবাসীকে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে আলোকিত পরিবেশে আনতে কোটি কোটি টাকা বায় করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না।  সরেজমিনে বৃহস্পতিবার রাতে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫  এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় সৌর বিদ্যুতের প্রায় অধিকাংশ সড়ক বাতি জ্বলছেনা। শহরের আড়পাড়া এলাকায় কালীগঞ্জ পৌরসভার কবরস্থানে সৌর বিদ্যুতের খুঁটিতে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ দিয়ে এলিডি লাইটের বাতি জ্বালানো রয়েছে। সেখানে থাকা পাঁচটি সৌর বিদ্যুতের খুটির মধ্যে ৩ টিতে রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগ একটি সম্পূর্ণরূপে অচল এবং অপরটি সচল থাকতে দেখা যায়। কালীগঞ্জ পৌরসভার একজন কর্মচারী জানান, সৌর সড়ক বাতি প্রকল্প কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক এবং বর্তমান প্রকৌশলী ঝিনাইদহের এক প্রকৌশলীর সহায়তায় এস্টিমেট করেন। পরে পৌর পরিষদের সহায়তায় পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়েকাজটি করান। একটি খুঁটি স্থাপন করতে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা কিভাবে ব্যায় ধরা হলো ? আর এত টাকা ব্যায় করে লাগানো বাতিগুলো দ্রুত নষ্ট হয়েই বা যাবে কেনো ? অর্থাৎ সৌর সড়ক বাতি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে হরি লুট করা হয়েছে জনগণের অর্থ।  শিবনগর কাচারি জামে মসজিদের মোয়াজিম শাকিল আহমেদ জানান,ভূমি অফিস এলাকার মধ্যে দুইটি নতুন সৌর বিদ্যুতের বাতি দেওয়া হয়েছে, যা ফজরের আজানের পূর্বেই নিভে যায়। আর ভূমি অফিসের প্রধান ফটকের সামনে থাকা সড়ক বাতিটি জ্বলে না এবং আমাদের মসজিদের কর্নারে থাকা সড়ক বাতিটি মাঝে মধ্যে জ্বলে। কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাহী প্রকৌশলী কবির হাচান জানান, এখন শীতকাল হওয়ায় রাত বড়। যে কারণে সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি গুলোতে শেষ রাতের দিকে আর চার্জ থাকে না। তাই বাতিগুলো হয়তো নিভে যায়। আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের কাছ থেকে সিডিউল অনুযায়ি কাজ বুঝে নিয়েছি। যদি কোথাও কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে সেগুলো ঠিক করা হবে।তবে প্রতিটি খুঁটির ব্যায় ১ লাখ ২২ হাজার টাকা ধরা হয়েছে, যার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি নিয়ে এড়িয়ে যান। কালীগঞ্জ পৌরসভার সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি স্থাপনকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানমেসার্স কুন্ডু ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী প্রলয় কুন্ডু জানান,মানসম্মত সোলার প্যানেল দিয়েই সৌর সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। এই সড়ক বাতির কোন ত্রুটি থাকলে আমরা তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিক করে  দেব। তবে শীতের কুয়াশার কারণে কিছুটা আলো কম হতে পারে। এটা যদি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ করে তাহলে আর সমস্যা হওয়ার কথা না। এছাড়া আমাদের প্রতিটি খুঁটিতে নাম-ঠিকানা এবং নাম্বার দেওয়া আছে। সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারলে আমরা ওইগুলো মেরামত করে দেবো।   কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, সৌর সড়ক বাতির আলো ঠিকঠাক জ্বলছে না এমন অভিযোগ আমার কাছেও আছে। আপনি বললেন, আমি ব্যাপারটি খতিয়ে দেখব। আর সড়ক বাতি স্থাপনে যদি কোনো অনিয়ম দুর্নীতি হলে থাকে তাহলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে