আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা

এফএনএস এক্সক্লুসিভ : | প্রকাশ: ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা

দেশজুড়ে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা। এবারের ঈদের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। সামপ্রতিক সময়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবার ঈদে কয়েকটি হাসপাতাল তাদের রোগী নিবন্ধন খাতায় দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে অটোরিকশার তথ্যও সংরক্ষণ করে। দেশের ১০টি বড় সরকারি হাসপাতালে ঈদের ছুটির চার দিনে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আহত হয়েছে। গত ঈদুল আজহায় সড়কে মোটরসাইকেল সবচেয়ে বেশি ৫১ দশমিক ৩৬ শতাংশ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। এবার মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা প্রায় সমান। হাসপাতাল, পুলিশ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর দুটি এবং ঢাকার বাইরে আট বিভাগীয় শহরের বিশেষায়িত ৮টি সরকারি হাসপাতালে ৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়, অটোরিকশায় ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ, চার চাকার যানে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ রোগী আহত হয়েছে। বর্তমানে দেশের মূল সড়কগুলোতে অধিকাংশ সময়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা দ্রুতগতিতে চলছে। তাতে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। ওসব বাহন দুর্ঘটনার হার বাড়াচ্ছে।

সূত্র জানায়, দেশের ১০ হাসপাতালে ঈদের আগেপরে টানা চার দিনে মোট ১ হাজার ১৩৭ জন সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন (৩২ দশমিক ২৭), ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজি দুর্ঘটনায় ৩৬৫ (৩২ দশমিক ১০ শতাংশ) জন আহত হন। আর বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মতো চার চাকার যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ১১৫ জন। ওই ১০টি হাসপাতাল হলো জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পুগু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। 

সূত্র আরো জানায়, গণমাধ্যমে এবার ঈদে দুই শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনার খবর এসেছে। এর মধ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঈদের ছুটিতে নগরীর মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছুটে চলায় অন্য যানবাহনের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ওসব রিকশার কাঠামো এর গতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে রাস্তায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। ওই চারদিনে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ৪১২ জন সড়ক দুর্ঘটনা আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৭১ জন ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় এবং ১৪১ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে আসে। ওই হাসপাতালে আসা সেবাপ্রার্থীদের ৮০ শতাংশ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে এবং চার দিনে ২৫১টি অস্ত্রোপচার হয়েছে।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৩ আহত চিকিৎসাধীন  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওই চার দিনে ৫৩ জন ভর্তি হন। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশায় আহত ২৪, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত ১৯ ও বাস দুর্ঘটনায় আহত ১০ জন। চিকিৎসাধীন সবাই ঢাকার বাইরের। অধিকাংশের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। রোগীর জটিলতা বিবেচনা করে অস্ত্রোপচারে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৬ জন ঈদের আগের দিনে চিকিৎসা নিতে আসেন। ঈদের দিন আসেন ১৬ জন। ঈদের পরের দিন আসেন ২২ জন। আহতের মধ্যে বেশির ভাগ মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, বাস ও ব্যাটারিচালিত রিকশার যাত্রী ছিলেন। তবে কয়েকজন প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের যাত্রীও আছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঈদের চার দিনে কমপক্ষে ২০০ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫০ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়, ৩০ জন ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং ২০ জন চার চাকার যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন। তাছাড়া খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলা থেকে ৭৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৭ জন ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় আহত হন এবং এর মধ্যে ৩ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  চার দিনে ৪৯ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহতদের সংখ্যা বেশি। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৮৬ জন চিকিৎসাধীন। তাদের বড় একটি অংশ তিন চাকার বাহনে আহত হন। তাছাড়া ঈদের ছুটির চার দিনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১ জন চিকিৎসা নিয়েছে। 

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সরওয়ার জানান, এবার ঈদে ঢাকা মহানগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বেশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মামলা করার সুযোগ না থাকায় একটু বেগ পেতে হচ্ছে। প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর তা সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়ন হলে আশা করা যায় সড়কে রিকশা কমে আসবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে