সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের ‘জাতীয় সমাবেশ’ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দিয়ে শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৯ জুলাই, ২০২৫, ০১:২৫ পিএম
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের ‘জাতীয় সমাবেশ’ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দিয়ে শুরু

রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার (১৯ জুলাই) প্রথমবারের মতো জাতীয় সমাবেশ আয়োজন করল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এই সমাবেশের প্রথম পর্ব শুরু হয়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে এই সমাবেশ দলটির রাজনৈতিকভাবে পুনরায় সক্রিয় হবার বার্তা দিচ্ছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সমাবেশের সূচনা হয় কোরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাত ও ইসলামি সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। ইসলামী সংগীতশিল্পী সাইফুল্লাহ মানসুরের সঞ্চালনায় সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিল্পীরা পরিবেশনায় অংশ নেন। সকাল থেকেই হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিলসহকারে উদ্যানে এসে হাজির হন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর ও বাইরের সড়কসমূহ নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।

সমাবেশ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রায় ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ভোর থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন, শাহবাগসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ও প্রবেশের নির্দেশনা দিচ্ছেন তাঁরা। সমাবেশস্থলে অজু, নামাজ, টয়লেট ও মেডিকেল বুথের ব্যবস্থাও ছিল।

জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই জাতীয় সমাবেশের আয়োজন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড),

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন,

মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার,

জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবার পুনর্বাসন,

সকল গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা,

সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন,

এক কোটিরও বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। সমাবেশের শুরুতে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমাদের জাতীয় সমাবেশ ইতোমধ্যে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।” তিনি আরও জানান, দেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দ আসতে শুরু করেছেন এবং দুপুর ২টা থেকে তাঁদের বক্তব্য শুরু হওয়ার কথা।

দলটি জানিয়েছে, বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এসব দলীয় প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গেছে।

স্বাধীনতা-উত্তর ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামী এককভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করছে। জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে এটি দলটির কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সমাবেশে বিশাল জনসমাগম নিশ্চিত করতে রেলপথ, নৌপথ ও সড়কপথে সংগঠনের পক্ষ থেকে আগেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা থেকেই নেতা-কর্মীরা রাজধানীতে আসতে শুরু করেন এবং আজ সকাল থেকে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন বাহনে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে