এবার টার্গেটের চেয়েও চার কোটি টাকা বেশী গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) আদায় করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। কর আদায়ের হার দাড়িয়েছে ১০৪.০৭%। কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকি এবং দ্রুত গৃহ মালিকদের রিভিউ আবেদন নিস্পত্তি, অনলাইনে পৌরকর পরিশোধ ও ছবিযুক্ত ভবনের বিল করা বাধ্যবাধকতার কারণে এ সফলতা এসেছে বলে মনে করছে কেসিসি।
তবে, এ বছর টার্গেটের অতিরিক্ত আদায় সম্ভব হলেও এখনো পর্যন্ত নগরীর প্রায় ৭৭ হাজার হোল্ডিং-এর বিপরীতে ৯০ কোটি টাকা কর বকেয়া রয়েছে।
কেসিসির কালেকটর অব ট্যাক্সেস আঃ মাজেদ মোল্লা বলেন, কেসিসি কর্তৃপক্ষ গৃহকর আদায়ের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৪৫ কোটি টাকা টার্গেট নির্ধারণ করে। সবার আন্তরিকতায় এবারই প্রথম তারা টার্গেটের বেশী গৃহকর আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। এবার গৃহকর আদায় হয়েছে ৫০ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৭৭৪ টাকা। যা টার্গেটের চেয়ে সাড়ে ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেশী। আদায়ের হার ১০৪.০৭%। এর আগে গত অর্থ বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হয় ৪৫ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, গৃহকর আদায়ে অনিয়ম, ভোগান্তি দুর করার জন্য কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করার নিয়ম চালু করে। ওই বছর ২৩ এপ্রিল অনলাইনে গৃহকর দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। যার সুফল গৃহকর আদায়ে দৃশ্যমান। এ কার্যক্রম আরো স্বচ্ছতা করার জন্য হোল্ডিং ট্যাক্সের সাথে ভবনের ছবি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাতে কেউ বড় ভবন ছোট বলে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে না পারে। এছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ভবনের হোল্ডিং ট্যাক্স নামমাত্র ধরা হয়। কিন্তু এবার অরাজনৈতিক সরকার থাকার কারণে সে সুযোগটা হাত ছাড়া হয়।
কর আদায় শাখার হিসেব মতে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ব্যাংকের মাধ্যমে গৃহ কর আদায় হয় ১০ কোটি ১২ লাখ ২৭ হাজার ৬৩১ টাকা। চেকের মাধ্যমে কর আদায় হয় ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯১ টাকা। অনলাইনে গৃহকর আদায় হয় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬৮৫ টাকা।
সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে নতুন করে হোল্ডিং তালিকাভুক্ত হয়েছে ৫৫৪টি। গত অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) নতুন হোল্ডিং তালিকাভুক্ত হয় ৯৬০টি। এখন প্রতিটি হোল্ডিং মালিক বিল প্রিন্ট হওয়ার পরই বাসায় বসে বিল পাচ্ছেন। আগে মালিকরা বিল পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ আসলেও এখন সেই সুযোগটা নেই। কারণ প্রতিটি ওয়ার্ডে কেসিসির আদায়কারীরা বিল প্রিন্ট হওয়ার পরই তা হোল্ডিং মালিকদের নিকট পৌচ্ছে দিচ্ছেন। এ জন্য সচেতন হোল্ডিং মালিকরা সময় মত বকেয়া কর পরিশোধ করছেন। এছাড়া যেসব মালিক তাদের ধার্যকৃত কর নিয়ে আপত্তি আছে তারা রিভিউ’র জন্য আবেদন করলে তা দ্রুত শুনানী করে নিস্পত্তি করা হচ্ছে। যার জন্য কর আদায় দিনকে দিন বাড়ছে।
কালেকটর অব ট্যাক্সেস আঃ মাজেদ মোল্লা। তিনি বলেন, ২০২৫ সালে কর আদায় শাখার প্রধান হিসেবে যোগদানের পর এবারই প্রথম কেসিসি টাগের্টের চেয়ে বেশী কর আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারী থেকে ট্যাক্সের সাথে ভবনের ছবি বাধ্যতামূলক করা হয়। যাতে কেউ ভবনের উচ্চতা কম বেশী বলে ফাঁকি দিতে না পারে।
প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রহিমা আক্তার বুশরা জানান, প্রশাসকের নিয়মিত খোজখবর রাখার কারণে হোল্ডিং ট্যাক্স বেশী আদায় হয়েছে। একই সাথে মাঠে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে কেসিসির ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করায় তার প্রভাবও পড়েছে বলে তিনি মনে করছেন।
কেসিসির কর আদায় শাখার সূত্রে জানা গেছে, এখনও ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে গৃহকর বকেয়া রয়েছে ৪৭ কোটি ৯৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে কেডিএ’র নিকট বকেয়া রয়েছে ১৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা, রেলওয়ের কাছে ২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, নৌবাহিনীর নিকট (তিতুমীর) ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর নিকট ৪৩ লাখ টাকা, সোনালী জুট মিলের নিকট ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা, হার্ডবোর্ড মিলের নিকট ৪০ লাখ টাকা, নিউজপ্রিন্ট মিলের নিকট ৩৩ লাখ টাকা, এ্যাযাক্স জুট মিলের নিকট ৩১ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগের নিকট ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানিক হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া পড়ে আছে। এছাড়া আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের এবং গৃহকর বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকার মত। শত চেষ্টার পর এর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এ বকেয়া দিতে উৎসাহিত হচ্ছে না। তবে আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।