স্ক্যানার না থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বাড়ছে

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: : | প্রকাশ: ১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:১৯ পিএম : | আপডেট: ১ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম
স্ক্যানার না থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বাড়ছে

চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিনেও স্ক্যানার না বসানোয় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি। অথচ বন্দরের জন্য বিগত ২০২৩ সালে চীন থেকে চারটি কনটেইনার স্ক্যানার আমদানি করা হয়। মূলত চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বাড়ানো ও মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য খালাস রোধ করতে ওসব স্ক্যানার আনা হয়। স্ক্যানারগুলো অপারেশনের আয়ুষ্কাল ১০ বছর ধরা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে কেটে গেছে বছরেরও বেশি সময়। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে এখনো একটিও স্ক্যানার বসেনি। তবে একটি স্ক্যানার বসানোর প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও বাকি সব স্ক্যানার কবে বসানো হবে তা অনিশ্চিত। তবে ব্যবসায়ীরা এসব স্ক্যানার দ্রুত বসানোর উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আর দীর্ঘসময়েও স্ক্যানার বসাতে না পারাকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উদাসীনতাকে দায়ি করা হচ্ছে। বন্দর ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরে কয়েক বছরে ধরেই মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে  চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বন্দরে স্ক্যানার বসানোর কথা ছিল। শুরুতে ছয়টি স্ক্যানার বসানোর জন্য এই প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৪৭ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ওই ছয়টি কনটেইনার স্ক্যানার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ প্রথমবার দরপত্র আহ্বানের পর ওই বছরের ২৪ জুন, ১৫ জুলাই, ৩ আগস্ট ও ২৫ আগস্ট আরো চারবার পিছিয়ে দরপত্র প্রকাশ করা হয়। ২৫ আগস্ট দরপত্র আহ্বান শেষে মূল্যায়ন কমিটির কাছে তিনটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র পাঠানো হলেও ২০২২ সালের ২৬ মে পুনরায় একই দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করে একনেকের অনুমোদন নিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠান নাকটেক কোম্পানি লিমিটেডকে কাজ দেয়া হয়। পরে গত বছরের ৪ জানুয়ারি চীনের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি হয়। তারা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে চারটি স্ক্যানার আনে। চুক্তি অনুযায়ী চীনা প্রতিষ্ঠানটির স্ক্যানারগুলো স্থাপনের পরবর্তী পাঁচ বছর সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করার কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১২টি গেটে ৯টি স্ক্যানার রয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেট, সিপিএআর গেট ও ৪ নম্বর গেটে রয়েছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে এফএস ৩০০০ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। তাছাড়া সিসিটি-২ ও জিসিবি-২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। সূত্র আরো জানায়, একটি স্ক্যানারের কাজ শিগগির শেষ হবে। ওই স্ক্যানারটি এনসিটি ২ নম্বর গেটে বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে এনসিটি ৪ ও ৫ এবং সিসিটি ২ নম্বর গেটে বাকি তিনটি স্ক্যানার বসানো হবে। এনসিটি-৫ নম্বর গেটে একটি স্ক্যানার আছে। তবে সেটা পুরোনো, প্রায় সময়ই নষ্ট থাকছে। আর ৪ নম্বরে একটা বন্ধ থাকছে। যেটা অনুরোধ করে করে চালাতে হচ্ছে। স্ক্যানারগুলো অপারেশনের আয়ুষ্কাল ধরা হয় ১০ বছর। ওয়ারেন্টি পিরিয়ড যখন থেকে শুরু, তখন থেকে আয়ুষ্কাল হিসাব করা হবে। এ ছাড়া চীনা প্রতিষ্ঠান এখনো অফিসিয়ালি স্ক্যানারগুলো বুঝিয়ে দেয়নি। মেশিনগুলো এখনো পার্টস হিসেবে আছে। আর ওসব স্ক্যানার বসাতে যত বেশি দেরি করবে, ততই দেশের লোকসান হবে। এদিকে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার উপকমিশনার ইমাম গাজ্জালী জানান, চীন থেকে আমদানি করা স্ক্যানারগুলো প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে ছিল। কারণ হলো, স্ক্যানারগুলো বসানো হবে চট্টগ্রাম বন্দরে, তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে স্ক্যানারগুলো বসানোর স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। স্ক্যানারগুলো আরো আগে বসানো যেত। তবে বিভিন্ন জটিলতা ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে স্ক্যানারগুলো বসাতে একটু বেশি সময় লেগেছে। এখন যেহেতু স্ক্যানার বসানোর জায়গা নির্ধারণ হয়ে গেছে, আর বেশি সময় লাগবে না। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, কাস্টমস যেসব স্ক্যানার বসাতে চেয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবুও কেন বসানো হয়নি তা জানা নেই।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে