পুঁইশাকের মেচড়ী চাষে সাড়া ফেলেছে কৃষকেরা

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : : | প্রকাশ: ২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৩১ এএম : | আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
পুঁইশাকের মেচড়ী চাষে সাড়া ফেলেছে কৃষকেরা

পুঁইশাকের (বীজ) মেচড়ী চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে এলাকার কৃষকরা। একই সাথে এলাকার নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ১ বিঘা জমিতে কম খরচে দুই থেকে তিন মাসে ২ লাখ টাকার বেশি পুইশাকের (বীজ) মেচড়ী বিক্রয় করে দ্বীগুন লাভের মুখ দেখছেন উপজেলার কৃষকেরা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা দিন দিন এই পুঁইশাক (বীজ) মেচড়ী চাষে আগ্রহী হচ্ছে। 

উপজেলার বৈডাঙ্গা গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের নারীরা দল বেঁধে পুঁইশাক মেচড়ী সংগ্রহ করছে। ভোর সকালে আসে এই নারীরা। পাঁকা ও বিক্রয় উপযুক্ত মেচড়ী সংগ্রহ করছে তারা। স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করতেই মাঠজুড়ে চলে এই কর্মযোগ্য। মাঠে গিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বৈডাঙ্গা গ্রামের জুমাত আলী তিনি দ্বিতীয় বারের মতো এবারও পুঁইশাকের মেচড়ী চাষ করেছেন। তার এই চাষ এলাকার কৃষক ও কৃষি বিভাগের কাছে ব্যপক সাড়া জাগিয়েছে। মাত্র ১ বিঘা জমিতে অল্প খরচে ২ লাখ টাকার বেশি পুইশাক (বীজ) মেচড়ী বিক্রয় করেছেন তিনি। তার দেখাদেখি একই মাঠের অন্য কৃষকেরাও পুঁইশাক বীজ চাষ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। কৃষকের উৎপাদিত পুঁইশাক বীজ প্রথমে ১২০ টাকা দরে বিক্রয় হলেও বর্তমান বাজারে এখনো এর চাহিদা থাকাই ৬৫ থেকে ৭০ টাকা পাইকারী দরে বিক্রয় হচ্ছে। এই চাষকে ঘিরে পুরুষের পাশাপাশি প্রায় শতাধিক নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করে একজন নারী শ্রমিক ৩শত টাকা উপর্জন করতে পারে। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে কাজ করতে পেরে স্বাবলম্বী হয়েছে এলাকার দরিদ্র পরিবার গুলো। কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এবছর উপজেলাতে ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। যেখানে ৯৫ হেক্টর জমিতে পুঁইশাক (জীব) মেচড়ী চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নেই ৮০ হেক্টরের বেশি জমিতে পুঁইশাক (জীব) মেচড়ী চাষ হচ্ছে। এই চাষ সহজলভ্য ও লাভজনক হওয়ায় দিন দিন কৃষকেরা ঝুকে পড়ছে।

নারী শ্রমিক যমুনা রানী বলেন, প্রতিদিন পুইশাক মেচড়ী তোলার কাজ করে থাকি। সকালে আসি দুপুরে চলে যায়, দিনে ৩শ টাকা দেয়। জমির মালিকেরা আবার দুপুরে রুটি কলা, কখনো বিস্কুট ও কলা খেতে দয়ে। স্বামী স্ত্রী দুজনেই কাজ করতে পারি, এতে করে আমাদের সংসার ভালোই চলে। এই মাঠে একটানা ৬ মাস কাজ করে থাকি, একসাথে ৫ থেকে ৭ জন মহিলা মিলে এখানে প্রতিদিন কাজ করি। কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, আমি এই প্রথম পুঁইশাক মেচড়ী চাষ করেছি। ৫৪ শতক জমিতে পুইশাক মেচড়ী চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ১লাখ ২০ হাজার টাকার মেচড়ী বিক্রয় করতে পেরেছি। বাজারে প্রথম ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে মেচড়ী বিক্রয় করেছি। এখন বর্তমান বাজার ৬৫ টাকা থেকে ৭০ কখনো ৭৫ টাকা পাইকারি বিক্রয় করতে পারছি। পুঁইশাক মেচড়ী চাষ করতে এখন পর্যন্ত কীটনাশক, সারসহ সবকিছু মিলায়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখনো সামনে ৩ থেকে ৪ চালান মেচড়ী বিক্রয় করতে পারবো। অন্য চাষের তুলনাই মেচড়ী চাষে খরচ অনেক কম এবং বাজারে এর চাহিদা থাকায় লাভও অনেক বেশি। কৃষক জুমাত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমে তিনি এবং পাশের এক কৃষক দুজনে মিলে এই চাষ শুরু করেন। প্রথম চাষ করে লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই এই চাষ করি। ধান চাষ না করে ধানের জমিতে এই মেচড়ী চাষ করে থাকি। ধানের থেকে এই মেচড়ী চাষে অধিক লাভ। আমাদের দেখাদেখি এখন এই মাঠের সবাই পুঁইশাক মেচড়ী চাষ করে থাকে। তিনি বলেন, এবছর বৃষ্টির কারণে সব ধরনের সবজির ক্ষতি হয়েছে। যার কারনে পুঁইশাক মেচড়ীর এতো চাহিদা। ১ বিঘা জমিতে পুঁইশাক মেচড়ী চাষ করেছি। এপর্যন্ত ১ লাখ টাকার মেচড়ী বিক্রয় করা হয়ে গেছে। এখনো সামনে যা আছে আরো ১ লাখ টাকার মেচড়ী বিক্রয় করতে পারবো। সব মিলায়ে এই চাষে খরচ হবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ১ বিঘা জমি চাষ করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ হলে আর কি লাগে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী বলেন, এবছর প্রকৃতির দূর্যোগের কারনে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। যার করণে কৃষক সঠিক সময়ে সবজি চাষ করতে পারেনি। তারপরও দেরীতে হলেও সদর উপজেলাতে ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। যেখানে ৯৫ হেক্টর জমিতে পুঁইশাক মেচড়ী (পুঁইশাক বীজ) চাষ করা হয়েছে। আমরা পুঁইশকের পাতা ও ডাটা খেয়ে থাকি। আমরা জানতাম না যে পুঁইশাকের মেচড়ীও খাওয়া যায়, এলাকার চাষীরাই প্রথম ৪ থেকে ৫ বছর আগে মেচড়ী চাষ করে মেচড়ী খাওয়া শিখায়েছে। তবে এই সবজি চাষে খরচ অনেক কম লাভ অনেক বেশি। আবার এর পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক খরচ অনেক কম, যার কারণে কৃষকেরা দিন দিন এই পুঁইশাক মেচড়ী (পুঁইশাক বীজ) চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বাজারে সবধরণে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকলেও এই পুইশাক মেচড়ীর চাহিদা অনেক বেশি এ কারনে বাজারে এই সবজির দামও অনেক।


0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে