বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের প্রতি নির্ভরতা বাড়ছে। রাজস্ব খাতে লেগেছে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধাক্কা। কঠিন হয়ে পড়েছে আর্থিক খাতকে সচল রাখা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে অত্যন্ত বেগ পেতে হচ্ছে। মূলত ব্যবসাবাণিজ্যের অচলাবস্থার কারণে রাজস্ব খাত স্বাভাবিক গতি পাচ্ছে না। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৩০ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বাড়ছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলা ডলার সংকটও কাটছে না। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার দেশি-বিদেশি সম্ভাব্য সব উৎসের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, প্রশাসনিক অচলাবস্থা, ব্যাংক খাতের অচলাবস্থার কারণে বর্তমান সরকারের পক্ষে বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন পড়ছে সরকারের নেয়া সংস্কার কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যেতেও। যা বাজেটে ছিল না। ওসব খরচকে এখন বাজেটে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব ঘাটতিতে আয় কম হওয়ায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে অর্থবছরের চার মাসে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৫৯ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এ ঋণের বেশির ভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে চলে গেছে। এ অবস্থঅয় দেশি-বিদেশি যে কোনো উৎস থেকে আয় বাড়াতে চাচ্ছে সরকার। তা নাহলে বাজেট বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ জন্য এনবিআরকে রাজস্ব বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে করদাতারা যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, অর্থ সঙ্কটে সরকার ঘোষিত বাজেট কিছুটা ছোট করতে যাচ্ছে। গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া কোটা আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত গণআন্দোলনের সময় দেশজুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত হয়। আর বিগত সরকারের পতনের আগে সাধারণ ছুটির পাশাপাশি বেশ কয়েক দিন কারফিউ ছিল। এ সময় কলকারখানা ও সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ছিল। শুল্ক-কর আদায়ে তার প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে নতুন সরকার গঠিত হলেও নানা ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ছিল। বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণি দাবিদাওয়া নিয়ে মাঠে নামে। আর অস্থিরতার মধ্যে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় করা যায়নি। এমন অবস্থা সামনের দিনগুলোতেও চলমান থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তবে প্রশাসনিক সংস্কারগুলো ঠিকঠাক করতে পারলে দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর রাজস্ব আদায়ের ধারায় কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের জন্য ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব তাদের বোর্ডে জমা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী মাসে অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা হলে দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট কিছুটা হলেও প্রশমন হবে। আর্থিক খাতের সংস্কার দ্রুত করতে ও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ঋণের বিষয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। ওসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের ৫০০ মিলিয়ন ডলার ও এডিবির ৬০০ মিলিয়ন ডলার। আগামী ডিসেম্বরে ওসব ঋণ প্রস্তাব সংস্থা দুটির বোর্ড সভায় অনুমোদন পেতে পারে। যা ডিসেম্বরের মধ্যেই পাওয়া যাবে।