দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে খুন, ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর অপরাধ। সরকার পতনের পর রাজধানীতে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ২৯টি খুনের ঘটনা ঘটে। আর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রাজধানীতে বিভিন্ন অপরাধ ও ঘটনায় দু’শতাধিক লাশ উদ্ধার হয়। এর মধ্যে শতাধিক খুনের ঘটনা রয়েছে। আর গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসে ৫৬টি খুনের ঘটনা ঘটে। ওই অনুযায়ী বিগত তিন মাসে ১৩০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে রাত গভীর হলে অপরাধীদের হাতেসড়কের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। রাজধানীতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিনতাই নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সহস্রাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও থানায় অভিযোগ করেছে মাত্র অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী। আর বেশিরভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যানের মধ্যে নথিভুক্ত করা হয়নি। পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোটা বিরোধী আন্দোলনকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্রসহ গোলাবারুদ লুট হয়েছে। ওসব উদ্ধারে অভিযান চলছে। বর্তমান আইনশৃঙ্খলার এমন পরিস্থিতিতে লুট হওয়া অস্ত্র গোলাবারুদের ভূমিকা থাকতে পারে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী পুলিশ, বিভিন্ন থানা, কারাগার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ হাজার ৮২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি গুলি লুট হয়। এর মধ্যে ৪ হাজার ২৮৩টি অস্ত্র এবং ৩ লাখ ৮৮ হাজার ১৮২টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ১ হাজার ৫৪৬টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে যৌথ বাহিনী ৩৮৯টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
সূত্র জানায়, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকালে গণভবনের দায়িত্বে থাকা এসএসএফ সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্টিক্যাল গিয়ার, অস্ত্র, গোলাবারুদ, সাজসরঞ্জাম, বেতার যোগাযোগ ও অপারেশনাল সরঞ্জামাদির মজুত ছিলো। তাছাড়া জাতীয় সংসদ ভবনেও এসএসএফের অস্ত্র গোলাবারুদ মজুত ছিল। ৫ আগস্ট জনতা গণভবন ও জাতীয় সংসদ ভবনে প্রবেশ করার পর ওসব অস্ত্রশস্ত্র লুট হয়ে যায়। লুট হওয়া অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, বেতার যোগাযোগের ডিভাইস ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ৩২টি ভারী অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। গোয়েন্দাদের ধারণা উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রের একটি বড় অংশ সারা দেশের আন্ডারওয়ার্ল্ডের হাতে চলে গেছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, পল্লবী, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, কলাবাগান, হাজারীবাগ, ঢাকা উদ্যান, বছিলা, আদাবর ও লালবাগ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে হাত বদলের মাধ্যমে ওসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ চলে গেছে। বর্তমানে কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী, দাগী আসামি ও জঙ্গি আসামিদের অনেকে বেরিয়ে এসেছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে পূর্ব শত্রুতা, ব্যক্তিগত বিরোধ ও আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রাতে পুলিশের টহল কমে যাওয়ায় বেড়েছে ছিনতাই। রাতে রাজধানীর পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে একটু নিরিবিলি পরিবেশ হলেই পথচারীরা ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছে। দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ার কারণে বিগত তিন মাসে ছিনতাইকারীদের হাতে চার জনকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়- চলতি নভেম্বর মাস থেকে রাজধানীতে টহল পুলিশের পাশাপাশি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। টহল বেড়ে যাওয়ার কারণে ছিনতাই আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে।
এদিকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর জানান, লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৭৫ ভাগ অস্ত্র ও ৬০ ভাগ গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর থেকে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানে লুট হওয়া অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। গোটা রাজধানীতে স্থায়ী চেকপোস্টের পাশাপাশি শতাধিক অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করে রাতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। প্রায় ৩০০ মোটরসাইকেল টহল টিম রাত ১০টার পর টহলে নামছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে পুলিশের নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অচিরেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতাবস্থায় ফিরে আসবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস জানান, অস্ত্র উদ্ধারের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্লক রেইড দেয়া হচ্ছে। র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হচ্ছে দাগী আসামি, মাদক ব্যবসায়ী, অস্ত্র ব্যবসায়ী।