নিষিদ্ধ হলেও এখনো হাট-বাজারে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন

এফএনএস এক্সক্লুসিভ : | প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:০৫ পিএম : | আপডেট: ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:৪১ পিএম
নিষিদ্ধ হলেও এখনো হাট-বাজারে  অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন

সরকার নিষিদ্ধ করলেও কোনোভাবেই থামছে না পলিথিনের ব্যবহার। বরং হাট-বাজারে তা অবাধে ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন মার্কেটে পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য ব্যানার টানানো হলেও তদারকিতে জোর নেই। কোনো ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করতে এখনো বাজারে যাচ্ছে না। অথচ সুপারশপে পলিথিন নিষিদ্ধের পর গত ১ নভেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের কাঁচাবাজারেও পলিথিন ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করে সরকার। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীসহ সারাদেশের হাট-বাজারে মুদিদোকান, সবজি বিক্রেতা, মাছ-মাংসের বাজার, খাবারের হোটেলসহ সব স্থানেই ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। মূলত সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করলেও বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলেনি। ফলে নিরুপায় হয়ে ব্যবসায়ীরা পলিথিন ব্যবহার করছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে উৎপাদন পর্যায়ে নজর দিতে হবে। আগে মানুষ পাটের বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতো। পলিথিন ব্যবহার না হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও অনেক খরচ বেঁচে যায়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে পলিথিন ব্যাগ বন্ধের বিষয়ে বলা হলেও মাঠপর্যায়ে তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। ফলে প্রতিটি দোকানে এখনো আগের মতোই পলিথিনের ব্যবহার চলছে। বাধ্য হয়ে এগুলোই ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর পলিথিন উৎপাদন বন্ধ না করতে পারলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাভ হবে না।

সূত্র জানায়, পলিথিন নিষিদ্ধের জন্য সরকার বিভিন্ন মার্কেটে ব্যানার ঝুলিয়ে মানুষকে সচেতন করছে। তবে পরিবেশের জন্য অন-টাইম চাইয়ের কাপ, প্লেট ও কোমল পানীয়র বোতল বেশি ক্ষতি করে। শহুরের বর্জ্যপদার্থের একটা বড় অংশই পলিথিন বা প্লাস্টিক। ওই পলিব্যাগগুলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য ক্ষতিকর। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যা ও ক্যানসারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। বিগত ২০০২ সালে ১ মার্চ আইন করে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে তৎকালীন সরকার। কিনতু দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি; বরং দুই দশকের বেশি সময় ধরে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েছে। এরপর সরকার ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে। কিন্তু তাতেও কার্যকর কিছু হয়নি।

সূত্র আরো জানায়, দেশে প্রায় ৩ হাজার কারখানায় দৈনিক ১ কোটি ৪০ লাখ প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন হয়। আর অধিকাংশ কারখানা রয়েছে রাজধানীর পুরান ঢাকায়। আর পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার (ইএসডিও) এক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ঢাকায়ই প্রতিদিন প্রায় ৮ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হয় এবং এর প্রায় সবই বর্জ্য হিসেবে মাটি ও নদনদীতে মিশে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করছে।

এদিকে এ বিষয়ে পরিবেশবিদদের অভিমত, আগে মানুষ কাপড়ের থলে বা পাটের ব্যাগ নিয়ে বাজার করতো। এখন দোকানদাররা দেয়া পলিথিন করেই পণ্য নিয়ে আসে। এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর এ আচরণ পরিবর্তন না হলে সরকার হাজার আইন তৈরি করেও পলিথিন নিষিদ্ধ করতে পারবে না। পলিথিন মানুষের জন্য কতোটা ক্ষতিকর তা না বুঝলে বর্জন করা সম্ভব না। সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করলেও পলিথিন উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ হচ্ছে কি না দেখতে হবে। যদি ফ্যাক্টরি বন্ধ না হয়, তাহলে বাজারে শুধু অভিযান চালিয়ে পলিথিন বন্ধ করা যাবে না। কারণ সোর্স বন্ধ না করতে পারলে আইন দিয়ে কোনো কিছু বন্ধ করা সম্ভব নয়।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে