মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদানের রায় দেয়ার পরপরই প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে। সহকারী শিক্ষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। আবার প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গ্রেড এক হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশংকা দেখা দিয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে চলেছে প্রাথমিক শিক্ষায়। তাই নবম গ্রেড বাস্তবায়নের এক দফা দাবী নিয়ে মাঠে নামছেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সংগঠন বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসোসিয়েশন।
৯ম গ্রেড বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর সংগঠনটির আহবায়ক মুহাম্মদ মিলন মিয়া ও সদস্য সচিব আল আমিন হালদার কর্তৃক ১২ মার্চ, ২০২৫ তারিখে স্বাক্ষরিত পত্রে এ দাবী করেন। এফএনএস২৪ ডট কমকে পত্র প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সদস্য সচিব আল আমিন হালদার। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় মাঠ প্রশাসনে এক ধরণের জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে, চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়বে বিধায় ৯ম গ্রেডের কোন বিকল্প নেই।
পত্রে বলা হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বাংলাদেশের সকল উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসে ২৬০৭টি পদের বিপরীতে প্রায় ১৮০০ জন সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার কর্মরত রয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ পরিসরে মাঠ পর্যায়ে কাজের দক্ষতা বিবেচনায় সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারগণ বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
জুলাই ২০১৮ হতে জুন ২০২৫ পর্যন্ত চলমান চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি-৪) সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদটি-কে ১০ম গ্রেড হতে ৯ম গ্রেডে উন্নিতকরণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। উক্ত প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পিইডিপি-৪ এর প্রথম বছরের উরংনঁৎংবসবহঃ খরহশ ওহফরপধঃড়ৎং (উখও)-৯ এর নির্ধারিত টার্গেট ওহংঃরঃঁঃরড়হধষ ঝঃৎবহমঃযবহরহম চষধহ (ওঝচ) বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রেড উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি।
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে কর্মরত একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২৫-৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৫-৩০ জন দ্বিতীয় শ্রেণির প্রধান শিক্ষক, ২০০-২৫০ জন সহকারী শিক্ষক, ৭০০০ ৮০০০ জন শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এসএমসি ও পিটিএ কমিটি সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার উন্নয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন পিটিআই-এর ইন্সট্রাক্টর পদটি ৩য় শ্রেনী হতে ১ম শ্রেণী, ডিপিইও/সুপারিনটেনডেন্ট (পিটিআই) ৯ম গ্রেড থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেড, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেড, সহকারী শিক্ষকদের ১৮তম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড এ উন্নীতকরণ করা হলেও রাজস্বখাতে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদটির গ্রেড উন্নয়ন কার্যক্রম তেমনভাবে দৃশ্যমান হয়নি। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর কাঙ্খিত পদোন্নতি বঞ্চিত থাকায় দাপ্তরিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে পদমর্যাদাগত বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে দিন দিন কর্মকর্তাগণের কর্মস্পৃহা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রাথমিক শিক্ষায় বৈষম্য নিরসনে গঠিত কনসালটেশন কমিটির রিপোর্টে শিক্ষা শাসন ও ব্যবস্থাপনা এর ৪নং কলামে জনবল এবং আর্থিক ও বস্তুগত সম্পদ ব্যবস্থাপনায় শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পদের গ্রেড উন্নীতকরণের সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়াও মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রাপ্তির রায় দিয়েছেন। ফলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা, মেন্টর হিসেবে সমগ্রেডে হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষায় মাঠ প্রশাসনে এক ধরণের জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে, চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ছে।
বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আল আমিন হাওলাদার বলেন, সম্প্রতি মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট প্রধান শিক্ষকদের ১০গ্রেড প্রদানের বিষয়ে রায় দিয়েছেন। এটা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভালো দিক। তবে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ তাদের সরাসরি মনিটরিং কর্মকর্তা হিসেবে সমগ্রেড হওয়ায় স্কুল মনিটর করা সহ বিভিন্ন কাজে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হবে, এমনকি মাঠ প্রশাসনে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়বে। বিধায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার-এর পদটিকে অবিলম্বে ১০ম বেতন গ্রেড থেকে ৯ম বেতন গ্রেডের উন্নীত করার দাবী জানাচ্ছি।