মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরী দিঘীরপাড়ে আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা শুরু। দুইশত বছরের অধিক সময় ধরে অনুষ্ঠিত এ চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে ছয়চিরি সহ আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে । ২ দিনব্যাপী এ চড়ক পূজা ও মেলা শেষ হবে ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার। ঐতিহ্যবাহী এই চড়ক উৎসব দেখতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামবে। গত কাল রোববার রাতে কালীপূজা ও অগ্নিকুন্ডে বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনি নৃত্যগীতি সহ শিব-কালী নৃত্য অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে চড়ক পূজা উৎসবের সূচনা হয়। হিন্দু ধর্মীয় পঞ্জিকা মতে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি দিন এ পূজা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, চড়ক পূজা শুরুর ১০/১২ দিন আগে থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারীদের মধ্যে ২৫/৩০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত সহকারে ভিক্ষায় করে পবিত্রতার সহিত সন্যাস ব্রত পালন করেন। এ সময় তারা রাত্রে আহার করেন এবং সারাদিন উপবাস পালন করেন। চড়ক পূজার ২ দিন আগে পূজারীরা শ্মশানে গিয়ে পূজা অর্চনা করেন ও শেষে গৌরীর বিয়ে, গৌরী নাচ ও বিভিন্ন গান গেয়ে এবং ঢাকের বাজনায় সরগরম করেন গোটা এলাকা।
এসময় দর্শনার্থীরা জয়ধ্বনি এবং নারীরা উলুধ্বনি দিতে থাকেন। জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ‘কালীনাচ’ এবং তান্ত্রিক মন্ত্র দিয়ে ৭টি বলিছেদ (লম্বা দা) এর উপর শিব শয্যা সবার কাছে খুব আকর্ষণীয়।
আজ দুপুর থেকে নারী পুরুষ দর্শনার্থীর বিশাল সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন চড়কপূজা উদযাপন কমিটি। আগামী কাল মঙ্গলবার ফের চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন দেবতার পূজা অর্চনা করা হবে। ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরি দিঘীর চার পাড়ের মধ্যে চড়ক গাছ স্থাপন করে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ভক্তরা পিঠের মধ্যে লোহার বড়শি গেঁথে বড় রশি বেঁধে চড়ক গাছে ঘুরতে থাকে। দক্ষিন পাড়ের ভক্ত নয়ন দাশ জানান, নিজেও আজ পিঠে বড়শি গেঁথে অন্য ভক্তদের ন্যায় চড়ক গাছে ঘুরবেন।
তান্ত্রিক মন্ত্রের গুনে বিভিন্ন অলৌকিক ধর্মীয় কর্মসূচী উপভোগ করার জন্য প্রতি বছরের মত এবারও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার, হাজার নারী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে দর্শনার্থীর উপস্থিতি ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। চড়ক পূজা উপলক্ষে এক বিশাল মেলা বসবে। মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিভিন্ন রকমারী জিনিসপত্রের সয়লাব থাকবে।
চড়ক পূজা ও মেলা পরিচালনা কমিটি প্রতি বছরের মতো এবারও মেলা সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে এ চড়ক উৎসব এ অঞ্চলের হিন্দুদের বেশ নাড়া দিয়ে আসছে। বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিন ও ১লা বৈশাখ বসে মেলা। শেষ চৈত্রের গোধুলীলগ্নে চড়ক গাছ মাটিতে পূঁতে ঘোরানো হয়। এর আগে ভক্ত ও পূজারীরা চড়ক গাছে পূজা সম্পূর্ন করেন।
চড়কপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অনিরুদ্ধ প্রসাদ রায় চৌধুরী ঋঘঝ প্রতিনিধি এস, কে, দাস এর সাথে আলাপকালে জানান, ইতিমধ্যে চড়কপূজা অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পূজা ও মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ বলেন, ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরি দিঘীর পারে চড়ক পূজা ও মেলা সিলেট বিভাগের মধ্যে এতবড় আয়োজন আর আমার জানামতে নেই। এখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) শামীম আকনজী জানান, চড়ক পূজা ও মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, চড়ক পূজা ও মেলায় যাতে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।