সারাদেশের মতো রংপুরও উত্তাল হয়ে উঠেছে গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন, নারী-শিশুসহ হাজারো নিরীহ মানুষ হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে। ইসরাইলি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে বিশ্বের মুসলীম উম্মাকে গাজা রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানান। সেই সাথে প্রয়োজনে ফিলিস্তিনের হয়ে যুদ্ধের যাওয়ারও ঘোষণা দেন তারা। সোমবার(৭ এপ্রিল) সকাল থেকেই রংপুরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, , সমাবেশ, প্রতিবাদ মিছিল ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রংপুর টাউনহল চত্বরে সকাল ১০ টার মধ্যেই বয়কট ইসরাইলি পণ্য, গাজায় হামলা নয়, শান্তি চাই, মুক্ত ফিলিস্তন চাইসহ নানা শ্লোগান সম্বলিত ব্যনার, প্লাকার্ড, মাথায় ও শরীরে ফিলিস্তিনি পতাকা জড়িয়ে জড়ো হতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, শিল্পী, কবি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ নানা পেশাজীবী মানুষ। সকাল ১১ টার মধ্যেই জনসমাবেশে রুপ নেয় রংপুর টাউনহল চত্বর। এরপর সেখানে ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এসময় সমাবেশে বক্তব্য দেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি, মহানগর যুদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহির আলম নয়ন, মহানগর সুজনের সভাপতি খন্দকার ফকরুল আনাম বেঞ্জু, সাধারণ মুসল্লি হাফেজ মোঃ আইয়ুব আলী, শিল্পী হৃদয় জে জে, বৈছাআ মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাওয়াক্কিল বিল্লাহ শাহ ফকির, যুগ্ম সদস্য সচিব রাজিমুজ্জামান হৃদয়, সংগঠক আদনান, সদস্য তাহা রহমানসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ। সভায় বক্তারা যুদ্ধ বন্ধে মুসলিম উম্মাহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সেইসাথে তারা ইসরাইলি পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানান। পরে বিশাল একটি প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে রংপুর নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত অফিস এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ সংহতি জানান। এসময় বিক্ষোভকারীরা গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, পোস্টার এবং ব্যানার প্রদর্শন করেন।
এদিকে দুপুরে কেরামতিয়া জামে মসজিদ থেকে সাধারণ মুসল্লিরা ও সদর জামে মসজিদ এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলাম জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে ফিলিস্তিনী শহীদদের উদ্দেশ্যে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করবেন কেরামতিয়া মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মো. বায়েজিদ হোসাইন। এসময় ধর্মপ্রাণ মুসলমান আল্লাহর দরবারে পবিত্র আকসা মসজিদ রক্ষা ও ফিলিস্তিন রক্ষায় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন এবং বিশ্বের সকল মুসলিম রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
অন্যদিকে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিশ্বব্যাপী ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে। সেই সাথে আজ দুপুরে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত বর্বর আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ এবং গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে দুপুরে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. প্রফেসর মোঃ শওকাত আলীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো অনেকে। এসময় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত বর্বর আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলা বন্ধে ইসরাইলকে বাধ্য করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহবান জানান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন, নারী-শিশুসহ হাজারো নিরীহ মানুষ হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে উত্তাল রংপুরে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে এবং সন্ধ্যায় বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লার মসজিদ ও মাদরাসা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।