চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের উপজেলাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে। কষ্টার্জিত উপার্জনে গড়ে তোলা বসতঘর কিংবা ধারদেনায় পরিচালিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মুহূর্তেই পরিণত হচ্ছে ছাইয়ের স্তূপে। আগুন কেড়ে নিচ্ছে মূল্যবান জীবনও। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের মাত্র ৬৮ দিনে চট্টগ্রামে অর্ধশতাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও আগুন লাগছে। এমন পরিস্থিতি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক ও অশনিসংকেতস্বরূপ। অগ্নিকাণ্ডের কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের বিশেষজ্ঞদের মতে, লুজ কানেকশন, লোডিং ক্যাপাসিটির অসামঞ্জস্যতা, নিম্নমানের তারের ব্যবহার ইত্যাদি কারণে শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটে।
শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিহীনতার কারণে বাড়িঘরের কাঠামো শুষ্ক থাকে, ফলে সামান্য ফুলকি থেকেই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া রান্নার চুলা, ধূমপানের অবশিষ্টাংশ থেকেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শত্রুতাবশত আগুন লাগানোর অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে, যা আরও উদ্বেগজনক। অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা ইতোমধ্যেই অসংখ্য মানুষের জীবনে চরম দুর্যোগ বয়ে এনেছে। সম্প্রতি মাত্র একদিনের ব্যবধানে পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শতাধিক দোকান, বসতঘর, গার্মেন্টস কারখানা ও বিপণিবিতান পুড়ে গেছে। এতে এক শিক্ষার্থীসহ কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছেন অনেকে। ক্ষতিগ্রস্তদের একজন শেখ আহমদ জানান, আগুনে তার ২০টি দোকান পুড়ে গেছে, যা পুনরায় নির্মাণ করতে তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই দিন পটিয়ার নাইখাইন গ্রামে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে লাগা আগুনে ২২টি কাঁচা বসতঘর সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মুক্তি পেতে এখনই কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সাধারণ নাগরিকদের আরও সচেতন হতে হবে।
বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, নিম্নমানের তার ও লুজ কানেকশন প্রতিরোধ, এবং অতিরিক্ত লোডিং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ভবন ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাদের সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে। অবহেলা ও অসতর্কতা যে কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, তা আমরা বারবার প্রত্যক্ষ করছি। তাই, এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এ সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।