সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলার সর্বত্র উৎসবের আমেজে উদযাপিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এ জেলার সকল শ্রেণি পেশার-মানুষ একাকার হয়ে বরণ করে নিচ্ছে ১৪৩২ বাংলা বছরকে।
‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সুর এবং বাঙালির লোক গান, প্রদর্শনী, র্যালী, আল্পনা, নানা বর্ণের ফেষ্টুনে রঙিন হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের রাজপথ । নারী পুরুষ, শিশু কিশোর রং বেরঙের পোশাকে সজ্জিত হয়ে মেতে উঠেছে বর্ষবরণের আনন্দে। ভোর থেকে উৎসবমুখর মানুষের পদচারণা। যেন জেগে উঠেছে চাঁদপুর। এ এক নতুন বাংলাদেশ।
দিনটিকে স্বাগত জানাতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং রাজনৈতিক দল বিএনপি উদ্যোগে শহরে পৃথক বৈশাখী আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই চাঁদপুর প্রেসক্লাব,চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংগঠন বর্ষবরণের নানা আয়োজন করেছে।
এবারের বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশের সকল নাগরিক, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কাছে অন্যরকম এক উৎসবের আবহ তৈরি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই প্রথমবারের মত দেশের সকল নাগরিক, সকল সম্প্রদায় ও নৃ-গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে উদযাপন করছে সর্বজনীন উৎসব এবারের ‘পহেলা বৈশাখ’।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনসহ অতিথিবৃন্দ।
নববর্ষের বর্ণিল শোভাযাত্রাটি স্টেডিয়াম সড়ক থেকে শুরু হয়। এরপর এটি মিশন রোড,হাজী মহসিন রোড, শহীদ রাজু চত্বর দিয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
শোভযাত্রা উদ্বোধন পূর্বে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, পহেলা বৈশাখ শুধুমাত্র নববর্ষ নয়, এটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। এই দিনে আমরা জাতিসত্ত্বা ও নিজেদের সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলবো। অসম্প্রদায়িক চেতনা বেশি কোন দেশ যদি ধারণ করে, সেটি বাংলাদেশ। কারণ এই উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেরই অংশগ্রহণ রয়েছে। আর এটাই হচ্ছে আমাদের অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষণ।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত জামিল সৈকতের সঞ্চালনায় অতিথিদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম , জেলা বিএনপি সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক।
এ সময় পৌর প্রশাসক মো. গোলাম জাকারিয়া, চাঁদপুর জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী মো. মনোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান প্রধান, সুধীজন, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সর্বস্তরের সকল পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে উৎসবমুখর করে তুলতে বের হয় এ শোভাযাত্রা। এর আগে সকাল সাড়ে আটটায় দলীয় কার্যালয় সড়ক থেকে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে বর্ণিল বৈশাখের শোভাযাত্রা বের করে চাঁদপুর জেলা বিএনপি।
চাঁদপুর জেলা শহরে শুভ নববর্ষের এই দুটি আনন্দ শোভাযাত্রায় বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়। রেলিতে রাখা হয় ঘোড়ার গাড়ি, বাদ্যযন্ত্র, মুখোশ, পাপেট, বাঁশের তৈরি বাঘ, পাখি, মাছ,ফুল ফল, মাছসহ নানা আকৃতির শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতিনির্ভর মানুষের সংগ্রামের রূপ।
এছাড়াও উৎসব উপলক্ষে চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উইমেন চেম্বার অব কমার্সের বৈশাখী মেলা চলছে। বিকালে চাঁদপুর প্রেসক্লাব সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে ঘুড়ি উৎসব এবং সেখানকার মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।